সব

রমার মুখে ১৫ আগস্টের রোমহর্ষক বিবরণ শুনলেন কূটনীতিকরা

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Friday 23rd August 2019at 11:53 pm
50 Views

 

অনলাইন ডেস্কঃ শেখ রাসেল বার বার জিজ্ঞাসা করছিলো, ‘ওরা কি আমাকে মেরে ফেলবে।’ উত্তরে পাশে থাকা আব্দুর রহমান শেখ (রমা) বলেছিল, ‘না, তোমাকে মারবে না।’ কিন্তু রমার সেই কথা সত্য হয়নি। ছোট রাসেলকে মায়ের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করা হবে বলে নিয়ে হত্যা করে ঘাতকেরা।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয় উপ-কমিটি আয়োজিত সেমিনারে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সামনে আরো একবার সেই রাতের ভয়াবহ স্মৃতির কথা কাঁপা কাঁপা গলায় বর্ণনা করেন সকলের পরিচিত রমা ভাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব পরিবারে হত্যার সেই কালো রাতের একজন সাক্ষী আব্দুর রহমান শেখ (রমা) তখন এ বাসায় কাজ করতেন।

আব্দুর রহমান শেখ (রমা) বলেন, ‘আবদুর রব সেরনিয়াবাতের হত্যাকাণ্ডের খবর পাবার পর বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আমাকে রাস্তায় পাঠান দেখে আসার জন্য। আমি দোতলা থেকে নেমে দরজা খুলে বাহিরে গিয়ে দেখে আর্মি অফিসাররা গুলি করতে করতে এগিয়ে আসছে। আমি আবারো দৌড়ে ঘরের ভেতর গিয়ে খবরটি বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে দিলে তিনি তার বড় ছেলে ও মেঝো ছেলেকে ডেকে আনতে বলেন। আমি তিন তলায় গিয়ে কামাল ভাই ও দোতলা থেকে জামাল ভাইকে ডাকি। এ সময় দোতলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন।’

তিনি ওই ভোর রাতের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যখন ওরা গুলি করতে করতে ঘরে প্রবেশ করে তখন শেখ রাসেল ও আমাদের নিয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসা একটি ঘরে দরজা বন্ধ করে ছিলেন। তিনি আমাদের তার পেছনে থাকতে বলেন। যখন দরজা খোলার জন্য বলা হয়, তিনি দরজা খুলেন। তাকে ওপরের ঘরে যেতে বলে সৈন্যরা। কিন্তু সিঁড়ির কাছে স্বামীর লাশ দেখতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে মেরে ফেলতে চাইলে এখানেই মেরে ফেলো।’ ওখানে থাকা সৈন্যরা তখন ফায়ার করে।

‘এরপর ওই সৈন্যরা বাড়ির সামনে আম গাছের কাছে নিয়ে বসায় আমাদের ও শেখ রাসেলকে। তখনও দোতলার ঘরগুলোতে গুলির আওয়াজ ও মেয়েদের চিৎকার-আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিলো। খুব সম্ভবত শেখ কামাল ও শেখ জামাল ভাইয়ের বউকে তারা ঐ সময় হত্যা করে। এরপর গুলির আওয়াজ থেমে যায়।’- কথাগুলো বলছিলেন আব্দুর রহমান শেখ (রমা)।

সেনা সদস্যদের নির্মম আচরণের সাথে তখনো পরিচিত ছিলেন না রমা। সে কারণেই আম গাছের নিচে বসিয়ে রাখা শেখ রাসেল যখন কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করছিলো, ‘ওরা কি আমাকেও মেরে ফেলবে।’ তখন ১২ বছরের রমা ও বসে থাকা অন্যরা বলেছিল, ‘না, তোমাকে মারবে না।’ হয়ত তাদের বিশ্বাস ছিল ছোট রাসেলকে মারার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু একটু পরে আর্মির বড় অফিসার ট্যাঙ্ক নিয়ে প্রবেশ করলে ওখানে থাকা এক সৈন্য তাকে গিয়ে বলে, ‘শেখ রাসেল তার মার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে।’ উত্তরে সেই আর্মি অফিসার বলেন, ‘আমরা সেই ব্যবস্থা করতে পারি।’ এরপর মায়ের সাথে দেখা করানোর কথা বলে শেখ রাসেলকে উপরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেশ কিছু সময় শেখ রাসেলের কান্নার আওয়াজ পাই আমরা। এরপর চার-পাঁচটা গুলির শব্দ শুনি। ব্যস। একেবারে নিঃশব্দ। কোনো কান্নার আওয়াজ নেই।

এভাবেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ভোররাতের ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করেন আব্দুর রহমান শেখ (রমা)।

সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয় উপ-কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. শাম্মী আহমদ ও উপ-কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

সূত্র কালের কন্ঠ


সর্বশেষ খবর