সব

নিজের পোশাক ছিল না, সেই আশিক এখন ফুটবলের ভবিষ্যত

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Saturday 7th September 2019at 4:08 pm
FILED AS: খেলা
59 Views

খেলাধুলা ডেস্কঃ একসময় তার ফুটবল খেলার জুতো ও পোশাক ছিল না। কেনার সামর্থ্য না থাকায় অন্যের জুতো পড়ে ফুটবল খেলতে হয়েছে অনেক সময়। গ্রামের মানুষের কাছেও শুনতে হয়েছে নানা কটূ কথা। সব বাধা পেরিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৫ জাতীয় ফুটবল দলে খেলছেন আশিকুর রহমান। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে তার বাড়ি।

আশিকুর রহমান বলছিলেন, ‘যখন ফুটবল প্রাকটিস শেষে খেলার জার্সি,বুট ও ফুটবল ব্যাগে ভরে বাড়ি ফিরতাম,তখন গ্রামের কিছু মানুষ নানা কটূ কথা বলত। আমি নাকি ফকিরের ঝোলা ঝুলিয়ে বাড়ি যাচ্ছি- এমন কথাও বলত অনেকে। তাদের কথায় মন খারাপ করতাম না। আর আমি যদি ফুটবল প্রাকটিসে না যেতাম তাহলে আমার মা ভাত খেতে দিত না।’

যখন আশিকের বয়স মাত্র ৬ মাস তখনই বাবা খলিলুর রহমান মারা যান। মা আছমা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা অর্থ পেতেন তা দিয়ে সংসার খরচ চালাতেন। এখন আশিক তার মাকে আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে দেন না। পরিবার চালানোর হাল নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

দেশের বাইরে ফুটবল খেলে এরই মধ্যে চমকও দেখিয়েছেন ১৫ বছর বয়সী আশিক। নেপালে অনুষ্ঠিত হওয়া মালদ্বীপের সাথে বাংলাদেশের খেলায় ৭৫ মিনিটে আশিক মাঠে নেমে একাই ২ গোল দেন। ওই খেলায় ৯-০ গোলে বাংলাদেশ জিতে যায়।

কথায় কথায় আশিক জানালেন, ফুটবল খেলার বুট ছিল না র। বুট কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। অন্যের বুট পড়ে মাঠে ফুটবল খেলেছেন কখনো কখনো। ভালো ফুটবল খেলে দেখে কেউ কেউ আবার তাকে বুটও কিনে দিয়েছেন।

খেলার শুরুটা হয় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে। এরপর ২০১৩ সালে উপজেলা থেকে জেলা পর্যায়ে অনুর্ধ্ব-১২ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নেয়। তবে খেলাতে চান্স পাননি সেইবার। বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে বয়স ভিত্তিক ঢাকায় অনুষ্ঠিত খেলাগুলোতে অংশ নিতে থাকেন। ক্লাবের হয়ে হয়ে খেলতে খেলতে একদিন হঠাৎ এক স্যার ফোন দেন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য।

আশিকের ভাষায়, ‘পরে সেখানে গেলে ভালো পারফমেন্সের জন্য অনুর্ধ্ব-১৫ জাতীয় ফুটবল দলে আমাকে রেখে দেয়। ওই দলে আমাকে সহ মোট ৩৫ জনকে নেওয়া হয়। কিন্তু আবারো বাছাই করে নেপালে খেলতে যায় ২৩ জন। তার মধ্যে আমিও ছিলাম। নেপালে সাফ অনুর্ধ্ব-১৫ তে বাংলাদেশ জিতে যায়। নেপালে ভালো খেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাকে ৪ লাখ এবং ফেডারেশন থেকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়।’

নেপালে ভালো খেলার জন্য পরের খেলা থাইল্যান্ডে তাকে সেরা ১১ জনে রাখা হয় বলে জানান তিনি। মায়ের উৎসাহ এবং স্থানীয় কিছু ভাইদের সাহায্য সহযোগিতা ফুটবল খেলায় তাকে এতদূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন জানিয়ে আশিক বলেন, ‘ফুটবল প্রাকটিসে না গেলে ভাত খেতে দিত না আমার মা। প্রাকটিস থেকে এসে রাতে ভালো খাবার দিত। অনেক সময় না খেয়েও প্রাকটিস করতে গেছি। ফুটবল মাঠে খুব সকালে গিয়ে একা একা ফুটবল প্রাকটিস করতাম। তখন মাঠে কেউ থাকত না। কষ্ট করেছি খুব। এখন কষ্টের ফল কিছুটা হলেও পেয়েছি। মাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় না। আমিই এখন সংসারের খরচ চালাচ্ছি।’

আগামী দিনের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে এই ফুটবলার বললেন, ‘আগামী দিনের লক্ষ্য বয়সভিত্তিক দলের পাট চুকিয়ে মূল জাতীয় ফুটবল দলে জায়গা করে নেওয়া। আন্তর্জাতিক ক্লাবগুলোর হয়ে ফুটবল খেলতে চাই। এছাড়া নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যেতে চাই। ভালো ফুটবল খেলতে পারলে ভালো জায়গায় চলে যাব।’

এ ব্যাপারে আশিকের মা আসমা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব। আমার ছেলেটাকে সবাই সহযোগিতা করবেন। সে যেন দেশের নাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে পারে।’


সর্বশেষ খবর