সব

আতংক:পাম্প মালিক তেলের তীব্র সংকট

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Sunday 17th April 2016at 12:00 pm
30 Views

14আমার বাংলা ডেস্কঃ তেলের দাম কমানোর আগাম সরকারি ঘোষণায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকাসহ সারা দেশের পেট্রল পাম্পে।

আমার বাংলা কাছে বলেন, লোকসানের ভয়ে পাম্প মালিকরা তেল নেয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন।

রাজধানীতে কিছু তেল পাওয়া গেলেও মহাসড়কের অধিকাংশ পেট্রল পাম্পে তেল নেই। যেখানে আছে সেখানে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঘোষণার প্রায় দু’সপ্তাহ পরও দাম কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
পাম্প মালিকদের মতে, গত তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় রাস্তাঘাটে তেলের অভাব তেমন বোঝা যায়নি।

এখন থেকে সংকট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে?

পেট্রল পাম্প মালিকদের অভিযোগ কোনো সরকারই তেলের দাম কমানো-বাড়ানোর বিষয়ে এভাবে আগাম ঘোষণা দেয়নি।

ফলে অতীতে কখনোই এমন অবস্থা তৈরি হয়নি।

কিন্তু এবার সরকারের অতিউৎসাহের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পাম্প মালিকদের ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, তেলের দাম কমানোর আগাম ঘোষণার সঙ্গে পাম্প মালিকদের তেল না ক্রয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো পাম্পই দু-এক দিনের বেশি মজুদ করে না। কাজেই তাদের লোকসান হওয়ার কোনো আশংকাই নেই।

তিনি বলেন, পরিপত্র জারি করার পরও ব্যবসায়ীরা তিন দিন সময় পাবেন। ওই সময়ের মধ্যে পাম্পের মজুদ তেল বিক্রি করে ফেলতে পারবেন। তবে যদি কোনো পাম্প তেল উত্তোলন বন্ধ ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।
বর্তমান সরকারও ৬ দফায় তেলের দাম বাড়িয়েছে ও কমিয়েছে। কঠোর গোপনীয়তায় এ সংক্রান্ত ঘোষণা এসেছে। মধ্যরাত থেকে মূল্য হ্রাস বা বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই মধ্যরাতে তেলের দাম বাড়ানোর পরিপত্র জারি করা হয়। এর আগে ২০১১ সালেও সব ধরনের তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা বাড়ানোর পরিপত্র জারি করা হয়েছিল আগাম ঘোষণা ছাড়া মধ্যরাতে। ২০০৯ সালে এক দফা তেলের দাম কমানোর পরিপত্র জারি হয়েছিল সবার অগোচরে। সেও কার্যকর হয়েছিল মধ্যরাত থেকেই। কিন্তু এই প্রথম ১০ দিন আগে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘটা করে তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। প্রথম দফায় বলা হয়েছিল এক সপ্তাহের মধ্যে তেলের দাম কমবে। জারি করা হবে পরিপত্র। খোদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রকাশ্যে তার সচিবালয়ের অফিসে এ ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রথম দফায় প্রতিমন্ত্রীর ঘোষিত সময়ের মধ্যে তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এরপর গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় থেকে দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরিপত্র জারি করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
এ অবস্থায় দেশব্যাপী পেট্রল পাম্পগুলো সরকারের তিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান- পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে। নামমাত্র তেল ক্রয় করে রাখছে। এতে সারা দেশে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। পাম্প মালিকদের দাবি, হঠাৎ যদি তেলের দাম কমিয়ে দেয়া হয় তাদের বড় ধরনের লোকসান হবে। প্রতি লিটার পেট্রল, অকটেনের দাম যদি ১০ টাকা কমে, সে ক্ষেত্রে এক গাড়িতে তাদের লোকসান হবে ৯০ হাজার টাকা। এই ভয়ে শুধু রাজধানী নয়, বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেশিরভাগ পেট্রল পাম্পে তেল পাওয়া যায়নি। তেলের অভাবে অনেক দূরপাল্লার গাড়ি মাঝপথে আটকা পড়েছে বলে বাস মালিকদের সূত্রে জানা গেছে।
সিটি পেট্রল পাম্পের মালিক নিলু চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, তারা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে মাসিক বাকিতে তেল বিক্রি করছেন। এ অবস্থায় তাদের বাধ্য হয়ে তেল মজুদ রাখতে হচ্ছে। যদি কোনো কারণে হঠাৎ তেলের দাম কমে যায় তাহলে তাদের ক্ষতি হবে। পেট্রল পাম্পগুলোতে তেল নেই ঢালাওভাবে এটা বলা ঠিক নয়। কারণ ব্যবসা করতে হলে লাভ-লোকসান মাথায় রাখতে হয়। তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে তেলের দাম কত তারিখ থেকে কমবে তার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে দেয়া। এতে সব পাম্প মালিক ওই পরিমাণ তেল মজুদ করবেন। এতে কোনো ভোগান্তিও হবে না আবার মালিকরা ক্ষতিগ্রস্তও হবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মীর আলী রেজা যুগান্তরকে বলেন, ‘অনেকে ভয়ে তেল তুলছেন না। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তিনি পেট্রল পাম্প মালিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, তেলের দাম কমানোর পরিপত্র হলেও সেটা কার্যকর হবে তিন দিন পরে। ফলে পাম্প মালিকরা তাদের গুদামের তেল বিক্রির সুযোগ পাবেন।’
আলী রেজা বলেন, বন্ধের দিনেও তাদের তেলের ডিপোগুলো খোলা থাকবে। পর্যাপ্ত তেল মজুদ রয়েছে। মালিকরা চাইলেই তেল তুলতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বড় পেট্রল পাম্প মালিক জানান, তারা সাধারণত গড়ে ৭-৮ দিনের তেল মজুদ করে থাকেন। কাজেই তিন দিন সময় দিলেও তাদের স্টক শেষ হবে না। কারণ তেলের দাম কমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকে তিন দিন অধিকাংশ গাড়ি রাস্তায় নামবে না। তারা ওই সময় সিএনজি দিয়ে গাড়ি চালাবে। তিন দিন পর যখন দাম কার্যকর হবে তখন সবাই কম দামে তেল ক্রয় করবে। এতে শত শত পেট্রল পাম্প মালিক বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বে।
গত ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। ৪ এপ্রিল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী তিন ধাপে দাম কমানোর পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। ৭ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো প্রস্তাবে ডিজেল, কোরোসিন, অকটেন, পেট্রলের দাম কমানোর কথা বলা হয়েছে। প্রথম ধাপে লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমতে পারে দাম। তবে অকটেনের দাম আরও বেশি কমার সম্ভাবনা আছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও দাম কমানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত পায়নি জ্বালানি বিভাগ।
সারা দেশে পেট্রল পাম্প আছে ১২০০টি। এর মধ্যে রাজধানীতেই আছে শতাধিক। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ২ থেকে ৩শ’ টন ডিজেল বিক্রি কমে গেছে। পেট্রল ও অকটেন বিক্রি কমেছে ২০ থেকে ২৫ টন। গত ৪ এপ্রিল দাম কমার ঘোষণার দিন দেশে অকটেন বিক্রি হয় ৫৫০ টন, কিন্তু এর পরদিন ৫ এপ্রিল তা নেমে যায় ৩১১ টনে।
পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা দায়ী নই। দাম কমে গেলে মজুদ তেল কম দামে বিক্রি করতে হবে। এই লোকসানের ভার জেনেশুনে কোনো ব্যবসায়ী নেবেন না।’ তিনি বলেন, সরকার আগাম ঘোষণা না দিলেই পারত। নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে দিলে পাম্প মালিকরা ওই সময়ের জন্য মজুদ তৈরি করে রাখতেন। এতে তারা লোসানের মুখে পড়তেন না।
পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিভাগীয় সভাপতি মিজানুর বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কমানো নিয়ে সরকারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে তেল উত্তোলন অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে এ অঞ্চলে। যদি লিটারে ১০ টাকা কমে তাহলে এক গাড়ি তেলে ৯০ হাজার টাকা ক্ষতি হবে। বর্তমানে অকটেন ৯৯, পেট্রল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 


সর্বশেষ খবর