ভিসির পদত্যাগের দাবিতে চলছে ষষ্ঠ দিনের আন্দোলন
অনলাইন ডেস্কঃ গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে ৬ষ্ঠ দিনের মতো শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। মঙ্গলবার ভিসি বিরোধী শ্লোগানে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
ভিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি নিয়ে গান, কবিতা, ছড়া পরিবেশন করা হচ্ছে আমরণ অনশন মঞ্চে।
শ্লোগান দিতে দিতে কৃষি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সীমান্ত মালাকার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপতালে নিয়ে তাকে ভর্তি করা হয়। ভিসির পদত্যাগই একমাত্র সমাধান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘আমাদের এক দফা এক দাবি দুর্নীতিগ্রস্ত এই ভিসির পদত্যাগ।’
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে আমরণ অনশন মঞ্চে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এমএসসি গণিত বিভাগের ছাত্র মো. আল গালিব।
লিখিত বক্তব্যে মো. আল গালিব বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক স্বৈরাচারী ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, যার নৈতিক স্খলন চরম পর্যায়ে। আমরা তার বন্দি জিঞ্জির থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বৈরাচারী কায়দায় ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিন মুক্তমনা শিক্ষক ও সমস্ত শিক্ষার্থীকে দমিয়ে রেখে শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত করে যাচ্ছেন। এ কারণে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছি।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত পাঁচ দিন ধরে বিনা বিরতিতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। এতে সংহতি প্রকাশ করেছে সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ। এই আন্দোলনে বিঘ্ন ঘটাতে আমাদের ওপর নির্যাতন ও হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত্ম আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
এ সময় আইন বিভাগের ছাত্র শফিকুল ইসলাম, আব্দুলাহ আল রাফি, নাহিদ মোল্লা, লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রী রেহেনুমা তাবাসসুমসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে পদত্যাগ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবীর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এতে আন্দোলনে নতুন মোড় নিয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনারও বিচার দাবি করছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে অন্যায়ভাবে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ফেসবুকে তীব্র সমালোচনার মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, কেলেঙ্কারিসহ ১৬টি কারণ দেখিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পরে বহিরাগতরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
এ হামলার পর ভিসি পতন আন্দোলন আরও জোরদার করে শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ আহম্মেদ শাফিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল না বানিয়ে, টাকা আত্নসাত করে এ ভিসি আমাদের ক্যাম্পাসকে কলঙ্কিত করেছে। তিনি নিয়োগ ও ভর্তি বানিজ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপর্যয় ডেকে এনছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বা রাষ্ট্রপতির আদেশ ছাড়া আমরা আন্দোলনে থেকে সরে দাঁড়াবো না।
ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, আমাদের আন্দোলন যতই তীব্রতর হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ততই আমাদের আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত করতে চাপ দিচ্ছে। কোন চাপের কাছে আমরা নতি স্বীকার করবো না। ভিসির পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
গনিত বিভাগের ছাত্র সোহেল মোল্লা বলেন, বিএনপিপন্থী স্বৈরাচারী এ ভিসির অত্যাচার নির্যাতনে আমরা অতিষ্ঠ হয়েই আন্দোলনে নেমেছি। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন, ইউজিসি তদন্তের উদ্যোগ নেয়। সেটিকে ভিসি বন্ধ করে দেয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, আমার শিক্ষার্থীরা আমার কাছে সন্তানতুল্য। তাদের সঙ্গে আমাদের মান অভিমান থাকতে পরে। তাই তারা দাবি দাওয়া নিয়ে শান্তিপূর্ন আন্দোলন করছে। তাদের ১৪ দাবি অনেক আগেই মেনে নেয়া হয়েছে। তারা এক সময় আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবে। তবে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।