সব

প্রশ্নের মুখে ছাত্রনেতাদের ঐক্য

AUTHOR: Mojammel
POSTED: Saturday 7th December 2024at 8:50 pm
2 Views

প্রাইমনিউজ ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ বাদে বাকি সব ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য ছিল। গত ৫ আগস্টের পর সেই ঐক্য ধরে রাখার কথা বলা হয়েছে। এক মঞ্চে তারা হাতে হাত মিলিয়েছেন। কিন্তু, সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহে সেই ঐক্য প্রশ্নের মুখে। দেশের স্বার্থে সবাই এক থাকার ঘোষণা দিয়েছেন, তবে পৃথক বৈঠকে।

বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরকে ডাকা হয়নি: সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাঁটাবনের একটি হোটেলে বৈঠক করেছে ২৮টি ছাত্র সংগঠন। এর মধ্যে ছিল ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন এবং আট বাম সংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট।  তবে তারা বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরকে ডাকেননি। এই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে না নেওয়া, ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি।

রুটিন বৈঠক বললেও জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকে না নেওয়ায় আলাদা এই বৈঠকে একত্রিত হয়েছিলেন তারা। এর আগে গত মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির ২০ জনের একটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দেশের স্বার্থে সবাই এক থাকার কথা জানান। পরদিন বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে বৈঠকে ডাকে। শিবিরসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সেই বৈঠকে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে তারা একমত হন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ে না ডাকায় সেই বৈঠকে ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট যায়নি।

প্রয়োজন হলেই কেবল ডাকে: ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধীরা তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ দিচ্ছেন না। প্রয়োজন হলেই কেবল ডাকে। প্রয়োজন শেষে আর খোঁজ নেয় না। আগে থেকে বাম সংগঠনগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দূরত্ব বজায় রাখছে। তাদের অনেকে শিবিরকে পছন্দ করেন না। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগের সভায় জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল করে সরকারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল ছাত্র ফেডারেশন এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ। সে কথা বৈষম্যবিরোধীরা রাখতে পারেননি। অন্যদিকে এত দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে নয় ছাত্রদল। ফলে কাঁটাবনের বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিটি সংগঠন তাদের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য একত্রিত হয়েছে। তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া অনেক সংগঠনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায়ও গেছে। ফলে কোনো বিষয়েই নীতিগত সিদ্ধান্তে যাওয়ার মতো আলোচনা হয়নি বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।

তবে বৈঠকে গণঅভ্যুত্থানে ঘটা গণহত্যার বিচার এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে থাকার বিষয়ে সংগঠনগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন।

এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি রাখা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, ৫ আগস্টের পর জাতীয় রাজনীতির হালচাল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আমাদের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছিল, সেখানে এক ধরনের ফাটল ধরেছে: সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী: জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মে আমরা সব ছাত্র সংগঠন ছিলাম। ৫ আগস্টের পর তারা অঙ্গীকার করেছিল, সব ছাত্র সংগঠনের পরামর্শ নিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নেব। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈষম্যবিরোধীরা ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে সরে গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছিল, সেখানে এক ধরনের ফাটল ধরেছে। এর দায় কোনোভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এড়াতে পারে না। সালমান আরও বলেন, আমরা দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের কথা বলেছি। আমরা মনে করছি, ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরছে না।

একই কথা বলেছেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ। তিনি সমকালকে বলেন, আমরা চাই অতি দ্রুত ডাকসু হয়ে যাক।

তবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমরাও একটা মত দিয়েছি যে, তাড়াহুড়ো করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিলে তা কার্যকর হবে না। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এখন যেহেতু ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক সময়; ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে; সুতরাং শিক্ষার্থীদের বোঝার সময় দিতে হবে। কোন ছাত্র সংগঠন ভালো, কোনটা মন্দ। সে সময়টুকু নিশ্চিত করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার কথা আমরা বলেছি।

নাছির বলেন, ১৫ বছর ধরে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে তুলনামূলক বিচার করার সুযোগ পায়নি। কারা শিক্ষার্থীদের জন্য কতটুকু কাজ করতে পারবে, কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে, এ পরিস্থিতি বোঝার জন্য যে পরিবেশ, তা তারা পায়নি।

ছাত্রশিবিরের বিষয়ে অনেকের আপত্তি ছিল: ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক: ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আহ্বান না করার বিষয়ে নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বসব। এখন যেহেতু তারা রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নয়, তাই তাদের বলা হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেও সামনে আহ্বান করা হবে। ছাত্রশিবিরের বিষয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। সে কারণে তাদের আমরা এ পর্বে আমন্ত্রণ জানাইনি।

বৈঠকে আরও অংশ নিয়েছে ছাত্র আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), জাতীয় ছাত্র সমাজ (জাফর), জাগপা ছাত্রলীগ (প্রধান), বাংলাদেশ ছাত্র মিশন, ভাষানী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ (পার্থ), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্রলীগ (নুর আলম), বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজ ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।

এ ছাড়া গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ ও মার্ক্সবাদী), ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন অংশ নিয়েছে।

মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করেই সমমনা সংগঠনগুলো বোঝাপড়া করে, এটাই স্বাভাবিক: সমন্বয়ক আব্দুল কাদের: এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের সমকালকে বলেন, কোনো সংগঠন আলোচনা সভায় কাকে দাওয়াত দেবে না দেবে, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কোনো ছাত্র সংগঠন তাদের উদ্দেশ্য এবং মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করেই সমমনা সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে, বোঝাপড়া করে, চুক্তি করে, এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে রাজনীতি করার কিছুই নেই।

 

 

 

 

 

 

সুত্র: সমকাল


সর্বশেষ খবর