সব

৩ জনে ১জন নারী যৌন নিপীড়নের শিকার: রাষ্ট্রদূতদের যৌথ নিবন্ধ

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Tuesday 8th December 2015at 11:30 pm
35 Views

22স্টাফ রিপোর্টার ঃ  বাংলাদেশী নিযুক্ত নয়টি দেশের নারী রাষ্ট্রদূত ১৬ দিনব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী এক কর্মতৎপরতা শেষে একটি যৌথ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকান দূতাবাস আজ (৮ ডিসেম্বর ২০১৫) গণমাধ্যমে এ নিবন্ধ পাঠায়। টাইমনিউজবিডির পাঠকদের জন্য দূতবাস প্রেরিত নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

“নয়টি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশে নিযুক্ত নয় জাতির নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমরা অবশ্যই অনেক বিষয় নিয়েই কাজ করছি। তবুও আমরা এ ব্যাপারে একমত যে সারা বিশ্বে, আমাদের দেশে, এবং বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সাড়া দেওয়া ও এর প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা জরুরী ভিত্তিতে আমলে নেওয়া উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীর প্রতি সহিংসতা (জেন্ডার-বেজড ভায়োলেন্স — জিবিভি) ভয়ানক আকারে সারা বিশ্বে বিস্তৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনের একজন নারী তার জীবনে সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন নিপীড়নের শিকার হন। বাংলাদেশ পরিসঙ্খ্যান ব্যুরো পরিচালিত নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে শতকরা ৮৭ ভাগ বিবাহিত নারী তাদের স্বামীর হাতে নিগৃহীত হন।

আমরা সবাই এর প্রতিরোধে কিছু করতে পারি।
নারীর প্রতি সহিংসতা সমস্ত সম্প্রদায়ের উপর হুমকিস্বরূপ, এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করে, এবং সহিংসতা ও দ্বন্দ্বকে উশকে দেয়। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায় যে নারীর উপর সহিংসতার উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাস্থ্যসেবা ব্যয়, নারীদের আয়ের উৎস হারানো, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, এবং বংশ পরম্পরায় নেতিবাচক প্রভাব।

“ইউএন উইমেন” অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৪ বছর পর্যন্ত নারী ও মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে সমষ্টিগতভাবে ক্যান্সার, সড়ক দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়া এবং যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর চেয়েও নারীর প্রতি সহিংসতা অধিকতর মৃত্যু ও শারীরিক অক্ষমতার কারণ। জীবন-সঙ্গীর কাছ থেকে সহিংসতার শিকার হওয়া থেকে শুরু করে যৌন হয়রানি এবং জোরপূর্বক বিয়েসহ নারীর প্রতি সহিংসতার বহু ধরন রয়েছে। সহিংসতা যে রকমই হোক তা আমাদের সামগ্রিক মানবতার জন্য কলঙ্ক, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাধা এবং তা আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহবান জানায়। সহিংসতা অত্যাবশ্যকীয় নয় এবং আমরা প্রত্যেকেই এটি বন্ধের জন্য কাজ করতে পারি।
“নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের কর্মতৎপরতা” সবার জন্য এ ব্যাপারে কাজ করার একটি সুযোগ।   প্রতি বছর ২৫শে নভেম্বর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসে ১৬ দিনের কর্মতৎপরতা শুরু হয়, যেটি ১০ই ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে শেষ হয়। জাতিসংঘের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রচারাভিযানে নারী ও পুরুষ, ছেলে ও মেয়ে, সরকারি কর্মকর্তা এবং কমিউনিটি নেতাসহ সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। পুরো পৃথিবী এবং বাংলাদেশ জুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী সচেতনতা ও প্রথা তৈরীতে মানুষ কাজ করছে যা এই অভিশাপ থেকে মুক্তির পূর্বশর্ত।

বৈশ্বিক পর্যায়ে, আমরা যে দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করি – ভুটান, ব্রাজিল, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্র – এই দেশগুলো নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নতুন ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে জাতিসংঘের সাথে কাজ করছে। নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পরস্পর সম্পর্কিত লিঙ্গসমতা এবং নারী ও কন্যাশিশুর ক্ষমতায়নে জোর দেয়। এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই দৃষ্টিপাত করতে হবে যদি আমরা উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করতে চাই। এখন বাস্তবায়নের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এ প্রচেষ্টায় অন্যান্য সরকার, বেসরকারি খাত এবং বিশেষ করে সুশীল সমাজের সঙ্গে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।

নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের জীবনে পদক্ষেপ নিতে পারি। ভুক্তভোগীদের কথা শুনে এবং তাদেরকে বিশ্বাস করে আমরা তাদেরকে সহায়তা করতে পারি। পুরুষ ও ছেলেদেরকে শেখাতে পারি যেন তারা নারী ও মেয়েদেরকে সহযোগিতা করে এবং তাদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। দেশে এবং বিদেশে আমাদের সরকারগুলো নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করে, নীতিনির্ধারকগণকে এই বিষয়ে শিক্ষা দেয় যেন আইনি সহায়তা বাড়ানো যায়, সেবাদানকারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয় যেন তারা ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয়তাগুলোকে ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারে, এবং বিচার ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে পারে। আমরা সেসকল প্রকল্পে অনুদান দেই যে সকল প্রকল্প ভুক্তভোগীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও কারিগরি শিক্ষা প্রদান করে এবং ধর্মীয়, ব্যবসায়িক এবং সামাজিক নেতাদের সাথে কাজ করি যেন নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা বন্ধ করা যায়। আমরা এই উদ্যোগের সাথে জড়িত হয়েছি কারণ আরও একটি বিষয়ে আমরা সকলে একমতঃ শুধুমাত্র সমষ্টিগত পদক্ষেপের মাধ্যমেই নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব।
নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ —

সম্মানিত রাষ্ট্রদূত মিজ পেমা শোডেন, রাজকীয় ভুটান দূতাবাস
সম্মানিত রাষ্ট্রদূত মিজ ওয়ানজা ক্যাম্পোস দ্য নব্রেগা, ব্রাজিল দূতাবাস

সম্মানিত রাষ্ট্রদূত মিজ হ্যান ফুগল এস্কেয়ার, ডেনমার্ক দূতাবাস
সম্মানিত রাষ্ট্রদূত মিজ সোফি অবেয়ার, ফ্রান্স দূতাবাস

সম্মানিত রাষ্ট্রদূত ম্যাডাম নোরলিন বিন্তি ওসমান, মালয়েশিয়া হাই কমিশন
সম্মানিত রাষ্ট্রদূত মিজ লিওনি মার্গারিটা কুয়েলেনায়ের, রাজকীয় নেদারল্যান্ড দূতাবাস

সম্মানিত রাষ্ট্রদূত মিজ মেরেটে লুন্ডিমো, রাজকীয় নরওয়ে দূতাবাস
সম্মানিত রাষ্ট্রদূত মিজ ইয়াসোজা গুনাসেকেরা, শ্রীলঙ্কা হাই কমিশন

সম্মানিত রাষ্ট্রদূত মিজ মার্শা বার্নিকাট, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস

সূত্র টাইমনিউজ বিডি

সর্বশেষ খবর