সস্ত্রীক আত্মসমর্পণ মাওবাদী নেতা রঞ্জিত
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পুলিশের কাছে সস্ত্রীক আত্মসমর্পণ করেছেন মাওবাদী আন্দোলনের নেতা রঞ্জিত পাল ওরফে রাহুল (৩১)।
বুধবার দুপুরে কলকাতা পুলিশ তাদেরকে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত করে।
কলকাতা পুলিশের সিআইডি কনফারেন্স রুমে কুচকুচে কালো শার্ট-ট্রাউজার পরিহিত, হাতে একটি সেল্ফ লোডিং রাইফেলসহ রঞ্জিত ও তার স্ত্রী ঝর্ণা গিরি ওরফে অনিতাকে হাজির করে পুলিশ।
এরপর পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন এই মাওবাদী দম্পতি।
সাংবাদিকদের সামনে দু’জনেই লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান। যার মূল কথা— হিংসাত্মক আন্দোলনে জনগণ ও পরিবারের ভাল করা সম্ভব নয়, সেটা তারা বুঝতে পেরেছেন। বরং, যেসব সমস্যার বিরুদ্ধে তারা আন্দোলনে নেমেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার সেই সব সমস্যার সমাধান করেছে ও করছে। তাদের মতো যারা ভুল পথে হেঁটেছেন, এই সরকার পুরনো অতীত ভুলে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ দিচ্ছে। যারা এখনও হিংসার পথে, তাদেরও এইভাবে ধরা দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফেরার আহ্বান জানান এই দম্পতি।
গত কয়েক বছর ধরে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় ও বান্দোয়ান এলাকা এবং ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা-গালুডিতে সক্রিয় ছিলেন তারা।
খুন-নাশকতাসহ অন্তত ৫০টি মামলায় অভিযুক্ত ১৭ বছর ধরে মাওবাদি আন্দোলন করা রঞ্জিত।
২০০৫ সালের জুলাইয়ে বারিকুল থানার ওসি প্রবাল সেনগুপ্ত মাওবাদীদের বুবি ট্র্যাপে নিহত হন। ওই ঘটনায় রঞ্জিতকে গ্রেফতার করা হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে গা-ঢাকা দেন।
এরপর ২০০৭ সালের মার্চে পূর্ব সিংহভূম জেলার বাকুরিয়ায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাংসদ সুনীলকুমার মাহাতোকে গুলি করে খুনের ঘটনায় আবারো আলোচনায় আসেন।
এরপর একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যান তিনি।
রঞ্জিতের স্ত্রী ঝর্ণা নন্দীগ্রামের সোনাচুড়ার মেয়ে। দশ বছর আগে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে তিনি মাওবাদী স্কোয়াডে যোগ দেন। স্কোয়াডে থাকা অবস্থায় দুজনে বিয়ে করেন। ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে এক ডজন মামলা অনিতার বিরুদ্ধেও।
দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনের হাত থেকে বাঁচতেই এই দম্পত্তি আত্মসমর্পন করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সূত্র।
এরআগে ঘনিষ্ঠ মহলে রঞ্জিত দলের অন্য কারো দ্বারা খুন হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন। এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা রঞ্জিতকে সস্ত্রীক আত্মসমর্পণে রাজি করান।
লিখিত বিবৃতি পাঠের সময় রঞ্জিত-ঝর্ণা জানান, তারা এসটিএফের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।