সব

তুরাগে সাহাবুদ্দিন হত্যা ”কু-প্রস্তাবেই খুন হয় নিরাপত্তাকর্মী”

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Thursday 23rd February 2017at 12:30 pm
55 Views

2মোঃ ইলিয়াছ মোল্লাঃ রাজধানীর তুরাগে প্রায় দেড় মাস আগে নিহত শাহাবুদ্দিন মোল্লার (৩৫) সঙ্গে বিরোধ লেগেই থাকত একই প্রতিষ্ঠানের আরেক নিরাপত্তা কর্মী আল-আমিনের। প্রতিটি ইস্যুতেই তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত। শাহাবুদ্দিন এক পর্যায়ে আল-আমীনের হবু স্ত্রীর সঙ্গে রাত কাটানোর প্রস্তাব দিলে হিংস্র হয়ে ওঠে আল-আমীন। প্রতিশোধ নিতে শাহাবুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় আল-আমীন। সম্প্রতি ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত রায়ের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন আল-আমীন । তুরাগে মেসার্স মেটকো এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী আল-আমীন এখন জেলহাজতে রয়েছেন । মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, মেসার্স মেটকো এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্র্মী হিসেবে কাজ করতেন শাহাবুদ্দিন মোল্লা, সেলিম ও আল-আমীন। রাতে তারা একসঙ্গেই থাকতেন। শাহাবুদ্দিন পরিবার নিয়ে পাশে বাসা ভাড়া
নিলেও রাতের বেলায় দায়িত্ব পালনের সুবাদে একসঙ্গে থাকা হতো। আর থাকার জায়গা, মশারি টাঙ্গানো, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে ঘরের লাইট বন্ধ করা নিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই কথাকাটাকাটি হতো । কিছু হলেই তারা একজন আরেক জনকে হত্যার হুমকি দিত। ঘটনার দিন রাতেও হুমকি-পাল্টা হুমকির ঘটনা ঘটে বলে স্বীকার করেছে আল-আমীন। শাহাবুদ্দিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার সময় অপর নিরাপত্তা কর্মী সেলিম গ্রামের বাড়িতে ছিলেন।

হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আল-আমীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বেলানগর গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ঘটনার পর পরই গা-ঢাকা দেয়ায় পুলিশ আল-আমীনকে সন্দেহের চোখে দেখে। এক পর্যায়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে সে পুলিশের কাছে সব কিছুই স্বীকার করে। পরের দিন তাকে আদালতে সোপর্দ করলে সে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সবকিছু স্বীকার করে । পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয় । তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পর শাহাবুদ্দিনের পরিবার, কর্মস্থলের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেও হত্যার কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না । ঘটনার দিন নিরাপত্তা রক্ষী সেলিম না থাকলেও খবর পেয়ে সে গ্রাম থেকে ঢাকায় এলেও গা-ঢাকা দেয় আল-আমিন । তার এই গা-ঢাকা দেয়ার বিষয়টিই পুলিশকে হত্যার জট খুলতে সহায়তা করে । ওসি (তদন্ত) শফিকুর রহমান বলেন, আল-আমীনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশে মাটির নিচ থেকে ধারালো ও রক্তাক্ত ‘দা’ উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, হত্যার জট খুলেছে। আল-আমীন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এখন অভিযোগপত্র তৈরি হচ্ছে। আশা করছি আল-আমীনকে একমাত্র আসামি করে সহসাই আদালতে অভিযোগপত্র দিতে পারব। নিহত শাহাবুদ্দিনের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার বালাকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম ধনু মোল্লা। খুন হওয়ার কিছু দিন আগে স্ত্রী ও দু’সন্তান নিয়ে তুরাগে একটি বাসা ভাড়া নেয়। দায়িত্ব পালনের সময় সে অন্য নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে রাতে থাকলেও দিনের বাকি সময় শাহাবুদ্দিন পরিবারের সঙ্গে থাকত । শাহাবুদ্দিন খুন হওয়ার পর তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। নিহতের বাবা ধনু মোল্লা যুগান্তরের সঙ্গে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। যারা আমাদের দুই নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে সে যেন কঠোর শাস্তি পায়।


সর্বশেষ খবর