শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৪
ডেস্ক রিপোর্টঃ ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ। তাপসনিঃশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি, অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।’
শুভ নববর্ষ। আজ পয়লা বৈশাখ, বাঙালির উৎসবের দিন। আর বৈশাখবরণে কবি রবীন্দ্রনাথের এ আবাহন যেন উৎসবের সূচনার প্রতীক। এখন বৈশাখ মানেই নবজাগরণ, নতুন স্বপ্নের দিনলিপি। মাঠে প্রান্তরে নতুন ফসলের দুলুনি মনকে প্রসন্ন করে তোলে পয়লা বৈশাখ। বৈশাখের রঙে রেঙে যায় প্রতিটি প্রাণ। এ যেন এক অভূতপূর্ব জলরঙ ছবি। যে ছবির অন্তর্গত মহিমার সঙ্গীত বাজে অমিয় সুরের ধারায়। ১৪২৪ বঙ্গাব্দের শুরুর এ দিনটি তাই আজ আবহমান বাংলার এক চিরন্তন রূপ।
প্রতি বছরই বাংলা বর্ষবরণে উন্মোচিত হয় ভিন্ন এক মাত্রা। যার ছাপ পড়ে জীবনের প্রতিটি স্পন্দনে। ব্যবসায়-বাণিজ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়া-দাওয়া, জীবনাচার, চাষাবাদ থেকে শুরু করে সর্বত্র বৈশাখ এনে দেয় অনন্য বৈচিত্র্য। বাঙালির জীবনে বৈশাখ এক উদ্দীপনারও দৃশ্যমান প্রেতি। ভাঙা আর গড়ার মধ্য দিয়ে বৈশাখ যেমন রুদ্ররূপে কখনো কখনো আবির্ভূত হয়, তেমনি বৈশাখের রয়েছে সবুজ, সুন্দর এক চিরায়ত প্রতিচ্ছবিও। যে প্রতিচ্ছবির গহনে লোকজ জীবনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য দোলা দেয় নতুন আঙ্গিকে।
গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি নগরজীবনেও পয়লা বৈশাখ ধরা দেয় প্রবল আবেগে। বৈশাখ আসে বছর ঘুরে রমনার বটমূলে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাতাঝরা আঙ্গিনায়, টিএসসি, চারুকলার নিজস্ব বৈভবে। বারণ না মেনে ভোরবেলা মুখর হয় ইলিশ-পান্তা ভোজনে। এভাবে চিরকালীন সম্প্রীতির মালা পরিয়ে দিয়ে যায় পয়লা বৈশাখ।
রাজধানীসহ সারা দেশে সব বয়সী মানুষ সাড়ম্বরে উৎসবে, আনন্দে মেতে উঠবে আজ। পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়া-দাওয়া, গানবাদ্য সব কিছুতেই প্রাধান্য পাবে বাঙালিয়ানা। আড্ডা, আমন্ত্রণ, উচ্ছ্বাসে কেটে যাবে দিন-রাত। ঢাকাবাসীর গৎবাঁধা জীবনযাত্রায় যোগ হবে ভিন্নতার স্বাদ।
রমনার বটমূলে ছায়ানটের বৈশাখের প্রভাতী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি চারুকলায় মঙ্গলশোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চারুকলা অনুষদের ১৮ ও ১৯তম ব্যাচের শিার্থীরা দায়িত্ব পেয়েছেন এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির।
রমনার বটমূল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা, টিএসসি, ছবিরহাট, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কসহ রাজধানীর সর্বত্রই কাকডাকা ভোর থেকে সূর্য বিদায় না নেয়া পর্যন্ত নববর্ষের আনন্দে হারিয়ে যাবে শিশু-কিশোর তরুণ-তরুণীসহ সব শ্রেণী সব পেশার ও সব ধর্মের মানুষ।
বাংলা নববর্ষ উপলে উৎসবের সাজে সেজেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর-নগর-বন্দর। জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার হাটবাজারেও আজ হবে হালখাতা উৎসব। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলাসহ নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
পয়লা বৈশাখ উপলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিওগুলো এ উপলে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। নির্বিঘেœ উৎসব পালনে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক দলের প্রধানরা।
নববর্ষের মূল আয়োজন থাকছে রমনার বটমূলে। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগেও উদযাপিত হবে নববর্ষ। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল-রেস্টুরেন্টেগুলোর উদ্যোগে উদযাপিত হবে নতুন বছরের উৎসব।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির আবহমানকালের সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক উৎসব। বাংলা নববর্ষের মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালির আত্মপরিচয়, উত্থান এবং জাতিসত্তা বিকাশের শেকড়। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ তাই কেবল আনুষ্ঠানিকতানির্ভর কোনো উৎসব নয়; তা বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শেকড় সন্ধানের মহান চেতনাবাহী দিন।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা নববর্ষ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বাঙালি জাতি বর্ষবরণ উৎসবকে ধারণ করেছে তাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা প্রগতি এবং অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছি। বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উপলে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।