সব

শত শত বিএসএফকে পতিহত করল ১০ বিডিআর

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Tuesday 18th April 2017at 7:39 pm
56 Views

24স্টাফ রিপোর্টারঃ ১৮ এপ্রিল ২০০১ সাল, বুধবার ভোরে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্প দখলের অপচেষ্টা চালিয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এ আগ্রাসী হামলা সাফল্যের সাথে প্রতিহত করেছিলেন বিডিআরের ১০ জন সাহসী সদস্য। এটি বাংলাদেশ রাইফেলসের সর্বকালের সেরা সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানগুলোর একটি।

এ কৃতিত্বের জন্য তারা রাষ্ট্রীয় পদক এবং জাতীয় বীর খেতাব পাওয়ার যোগ্য। ওই সময়ে বিডিআরের অফিসাররা এই ১০ জনকে বীরসেনানির সম্মান দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ এই ১০ জন বীর জওয়ানকে নিয়ে সর্বদা গর্ববোধ করেন।

ওই দিন প্রভাতে সূর্য ওঠার আগেই বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিএসএফের অতর্কিত যৌথ হামলা প্রতিহত করে বিডিআর। হামলাকারী সৈন্যদের আকস্মিক গুলিতে শহীদ হন বিডিআরের ল্যান্স নায়েক মো: ওয়াহিদুজ্জামান। এতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠেন আমাদের ১০ জন বীর জওয়ান। মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারে বিডিআরের এ বীর জওয়ানেরা অপ্রতিরোধ্য জবাব দিয়েছিলেন। পড়েছিল আক্রমণকারী সৈন্যদের ১৮টি লাশ। জামালপুর ৩৩ রাইফেল ব্যাটালিয়ন ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মো: সাইরুজ্জামান বলেছেন, বড়াইবাড়ি ক্যাম্পের ওই জওয়ানরা বিএসএফকে প্রতিহত করতে না পারলে ওরা সে দিন আমাদের তিনটি ক্যাম্প দখল করে নিত।

ঘটনার সময় ভারতের মাইনকারচর সীমান্তের এপারে বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পে ডিউটিতে ছিলেন মাত্র ১১ জন বিডিআর সৈনিক। তারা হলেন নায়েব সুবেদার আবদুল্লাহ, হাবিলদার নজরুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক ফজলুল হক, ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহি মোয়াজ্জেম হোসেন, ইদ্রিস আলী, আবদুল হামিদ, লিটন মিয়া, বদরুজ্জামান, এফএসের নায়েক জালালউদ্দিন মিয়া ও সিপাহি ইছহাক।

তাদের মধ্যে পালা করে রাতে চারজন রণপাহারায় নিয়োজিত ছিলেন। ভোর প্রায় ৪টার দিকে গ্রামের মিনহাজ নামে এক সাহসী দেশপ্রেমিক তরুণ বিডিআর ক্যাম্পে খবর নিয়ে আসেন, ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে শত শত বিএসএফ সদস্য বড়াইবাড়ি গ্রামে অনুপ্রেবশ করেছে। তখনই হাবিলদার নজরুল ইসলাম সব বিডিআর সৈনিককে অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেন। ভোর প্রায় ৫টায় তিন শতাধিক ভারতীয় সৈন্য পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক দিয়ে বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। তখনো পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠেনি।

পরিস্থিতি বুঝে উঠেই হাবিলদার নজরুল ক্যাম্পের চার পাশের বাংকার থেকে ভারতীয় সৈন্যদের দিকে মেশিনগান নিয়ে অ্যাম্বুসে থাকার নির্দেশ দিলেন। কিছুক্ষণ পরই ভারতীয় সৈন্যরা বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করে বড়াইবাড়ি ক্যাম্পের দিকে এগোতে থাকলে বিডিআর একযোগে চারটি বাংকার থেকে মেশিনগানের পাল্টা ব্রাশফায়ার শুরু করে। এ সময় বিএসএফ থমকে গিয়ে আবারো গুলিবর্ষণ শুরু করে। বিএসএফের গুলিতে বিডিআরের ল্যান্স নায়েক ওহিদুজ্জামান বীরের মতো যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন।

এতে বিডিআরদের প্রতিরোধের চেতনা অনেক বেড়ে যায়। ভোর সোয়া ৫টায় বিডিআরের ১০ জন সদস্য একসাথে ভারতীয় সৈন্যদের লক্ষ্য করে অবিরাম গুলি বর্ষণ করতে থাকেন। অবস্থা বেগতিক দেখে হানাদার পিছু হটতে থাকে। বিডিআরের ব্রাশফায়ারে তখন আগ্রাসী হামলাকারীদের লাশ পড়েছিল। গ্রামবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ইতোমধ্যে পাশের হিজলমারী ক্যাম্প থেকে ছয়জন বিডিআর বড়াইবাড়িতে এসে প্রতিরোধে অংশ নেন। বিডিআরদের প্রচণ্ড আক্রমণে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় সৈন্যরা পিছু হটে গিয়ে কয়েকটি বাড়িতে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওইসব বাড়ি থেকে লোকজন প্রাণ বাঁচাতে আগেই পালিয়ে গিয়েছিলেন। বিডিআরের ওয়্যারলেস মেসেজ পেয়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম ও রংপুর থেকে অতিরিক্ত বিডিআর বড়াইবাড়িতে পৌঁছে বিএসএফের আক্রমণ মোকাবেলা করে।

হাবিলদার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের মাইনকারচর বিএসএফ ক্যাম্প থেকে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আহ্বান জানিয়ে আমাদের একটি রহস্যময় চিঠি দেয়া হয়।

তখনই আমাদের সন্দেহ হয়, বিএসএফ কুমতলব আঁটছে। এ জন্য আমরা ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। তিনি জানান, বড়াইবাড়ি ক্যাম্পে সাধারণ বিএসএফ হামলা করেনি। পরিকল্পিতভাবে বড়াইবাড়ি ক্যাম্প দখলের জন্য ওই দিন বিশেষ কমান্ডো বাহিনী পাঠানো হয়েছিল (তথ্যসূত্র : দৈনিক আজকের কাগজ, রোববার ২২ এপ্রিল, ২০০১)।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, ভাঙ্গা, ফরিদপুর

সূত্র টাইম নিউজ বিডি

 


সর্বশেষ খবর