সব

নড়াইলে দেড়শ স্কুল ছাত্রী যাতায়াতের জন্য বাইসাইকেলকে বেছে নিয়েছে

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Monday 22nd May 2017at 1:42 pm
78 Views

44

উজ্জ্বল রায়ঃ নড়াইল সদর উপজেলার গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়র প্রায় দেড়শ ছাত্রী এখন ছেলেদের মতোই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। এখন আর তাদের ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না তাদের। বাবা-মায়ের কাছ থেকেও বাড়তি টাকাও নিতে হয় না।

বখাটেরাও রাস্তা থেকে আগের মতো উত্যক্ত করার সুযোগ পায় না। সাইকেল চালিয়ে প্রথমদিকে অনেকইে নানারকম মন্তব্য করেছে। সবকিছু উপেক্ষা করে ওরা নিয়মিত ও সময়মত স্কুল উপস্থিত হতে পারছে। পড়াশোনা ভালো হওয়ায় বিদ্যালয়ের ফলাফলও ভাল।

43

আগামীতে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কার দূর করার প্রত্যায় নিয়ে ওরা এগিয়ে চলেছে। জানা গেছে, নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিনশত। এই বিদ্যালয়টিতে নড়াইল সদর ও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। দুটি উপজেলার মালিয়াট, বাকলি, হাতিয়াড়া, গুয়াখোলা, হাতিয়াড়া, বেনাহাটি, কমলাপুরসহ এগারোটি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে। দুই জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই এলাকাটি অনেকটা অবহেলিত এবং অধিকাংশ রাস্তাঘাট কাঁচা। ৫/৭ কিলোমিটার দূরের শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ৪/৫ বছর আগে ছেলেরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করলেও মেয়েদের ভ্যানে ও পায়ে হেঁটে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হতো।

দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে মেয়েদের সাইকেল কিনে দেওয়া হয়। চার বছর আগে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রী সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করে। এরপর এর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। বর্তমানে প্রায় দেড়শ ছাত্রী নিয়মিত সাইকেলে নিয়ে যাতায়াত শুধু নিজে নয়, বান্ধবীদেরকেও সাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে আসে। ওই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী সান্ত্বনা গুপ্ত বলেন, আমার বাড়ি বাকলি গ্রামে। স্কুল থেকে দুরত্ব ৫ কিলোমিটার। এক সময়ে ভ্যানে ও পায়ে হেঁটে স্কুলে চলাচল করতাম। তখন ঠিকমতো ক্লাস ধরতে পারতাম না। এছাড়া গাড়িভাড়া বাবদ বাবা মাকেও অতিরিক্ত টাকা দিতেও অসুবিধা হতো। তখন আমরা কয়েকজন ছাত্রী মনে করলাম ছেলেরা যদি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে পারে তাহলে আমরা পারব না কেন?। তখন থেকে স্যার ও আমাদের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে সাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত নিই। বাড়িতে ও গ্রামের ফাঁকা জায়গায় সাইকেল চালানো শিখে আমরা কয়েকজন স্কুলে আসা যাওয়া শুরু করলাম। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী দীপ্তি পাঠক বলেন, ‘আগে ভ্যানে করে স্কুলে আসতে হতো। তখন বাবা মায়ের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিতে হতো। ভ্যান না পাওয়ায় অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু এখন আর কোনো সমস্যা হয় না। এখন আমরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারি এবং পড়াশোনাও ভালো হচ্ছে। তবে সাইকেলে চালিয়ে যাতায়াতের সময় রাস্তার অন্যান্য যানবাহন সাইড দিতে চায় না। অনেকে ব্যঙ্গ করে। কয়েকদিন আগে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় আমাদের দুজন ছাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে।’ মালিয়াট গ্রামের সেজুতি রায় বলেন, ‘আমি ৫ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসি। কিন্তু স্কুলে সাইকেল গ্যারেজ না থাকায় কিছুদিন আগে আমাদের বান্ধবীদের দুটি সাইকেল চুরি হয়ে যায়। স্কুলে একটি সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ প্রয়োজন।’ দশম শ্রেণীর ছাত্রী খুশি সিকদার বলেন, ‘এই স্কুলে ১১টি গ্রামের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে। ছেলেদের মতো মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। আমরা প্রথমদিকে সাইকেল চালাতে লজ্জা পেতাম। এখন আমরা অনেক সাহসী। আমরা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাব। এলাকার বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কার দূর করতে সকলে কাজ করে যাব।’ এই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র সোহাগ গুপ্ত বলেন, ‘আমাদের স্কুলের ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে আসে। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে বখাটেরা তাদের উত্যক্ত করার চেষ্টা করলে আমরা ছেলেরা প্রতিহত করি। অনেক সময় স্যারের সহযোগিতা এবং ওইসব বখাটেদের বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করি।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এ স্কুলের মেয়েরা ৫/৭ কিলোমিটার দুর থেকে স্কুলে আসে। তাদের হেঁটে আসতে অনেক সময় লাগে এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যার কারণে ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী হতে পারে না। আমরা ও অভিভাবকরা চিন্তু ভাবনা করে মেয়েদের সাইকেল চালনায় অনুপ্রেরণা দিয়েছি। তাদেরকে বলেছি ছেলেরা যদি সাইকেল চালিয়ে আসতে পারে, তাহলে মেয়েরা কেন পারবে না। তখন অভিভাবকদের সম্মতিতে ছাত্রীদের সাইকের কিনে দেয় তাদের অভিভাবকরা। এখন ওরা নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। আমরা এখন ছেলে ও মেয়েদের আলাদাভাবে দেখি না। সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসতে এখন সময় কম লাগছে, অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং নিয়মিত ও সময়মত স্কুলে উপস্থিত হতে পারছে। যার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও বেড়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবছর ওই বিদ্যালয় হতে সব ছাত্রছাত্রীই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়ে শতভাগ পাশ করেছে। তবে অবকাঠামো সমস্যার জন্য সাইকেল রাখার জায়গা নেই এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।‘গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াতের ঘটনাটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এভাবে যদি অন্যান্য স্কুলের মেয়েরাও স্কুলে যাতায়াতের জন্য বাইসাইকেলকে বাহন হিসেবে বেছে নেয় তাহলে তাদের অর্থ, সময় সব কিছুই সাশ্রয় হবে। এই স্কুলটির অবকাঠা মোগত উন্নয়ন জরুরি আশা করি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।


সর্বশেষ খবর