ঝিনাইদহে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প
মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জলঃ ঝিনাইদহ জেলায় এক সময় শহর ও গ্রাম সবখানেই বাঁশের তৈরী মোড়া, মিটসেফ, ঝুড়ি, চেঙারী, টোকা, মাঝধরার নানান জাতের ফাঁদ, চাটাই,ধান রাখার ডোল ও গোলার ব্যবহার ছিল সচরাচর। কালের আবর্তে আধুনিক সভ্যতার উৎকর্ষতায় হারিয়ে যেতে বসেছে এসবের ব্যবহার। শুধু হারিয়ে যায়নি,অনেক দরদে সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় যারা এসব জিনিস পত্র তৈরী করত সেসব অনেক কারিগর। পূর্ব পুরুষের শেখানো এসব কাজ এখনও করে যাচ্ছে তারা, তবে বাণিজ্যিক ভাবে নয় নিজেদের ব্যবহারের জন্য ও খুচরা দুই একটি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ।
বাঁশ শিল্পী ভক্ত দাস জানান, বর্ষাকালে আগের মত পানি না হওয়ায় এবং কৃষিতে কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে খালবিলে মাছ না থাকায় মাছ ধরার নানান ফাঁদ তৈরী করা বাদ দিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। এদিকে কৃষক আর গোলাভরে ধানও রাখতে পারে না। কারণ, ধান ওঠার সাথে সাথেই বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয় পরিশোধ করতে হয় । কাজেই ব্যবহার কমছে গোলা আর ডোলের। প্লাস্টিক সামগ্রীর জন্য কমেছে মোড়া ও ঝুড়ির ব্যবহার। তাছাড়া বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষ এগুলোকে সেকেলে ভাবে। অথচ এক সময় কি শহর,কি গ্রাম প্রতিটি বাড়ীতে বাঁশের তৈরী জিনিসপত্র ছাড়া যেন কিছুই কল্পনা করা যেত না। কিন্তু কালের আবর্তে আমাদের বাঁশ শিল্প এখন মৃতপ্রায় । বেশির ভাগই এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে অন্য পেশায় কিন্তু এখনও এ শিল্পকে আঁকড়ে আছে পোড় খাওয়া অল্প সংখ্যক শিল্পী যারা পূর্ব পুরুষের শেখানো কাজের উপর মেধা ও শ্রম দিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন মৃত প্রায় এ শিল্পকে ।
এদিকে বাঁশ শিল্পী শ্যামদাস জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমি এ পেশায় আছি। লাভ সীমিত হলেও মাঠে কৃষি জমি না থাকায় এখনও এ পেশায় জড়িত থাকতে হচ্ছে আমাকে। ওদিকে বাঁশ শিল্পী আরতী দাস জানান, আমি অনেক দিন ধরে এ পেশায় ছিলাম। এ পেশা আমার হৃদয়ের স্পন্দনে মাখা। কিন্তু বর্তমানে এই কাজ আমার দুই সন্তানের অনুরোধের জন্য ছেড়ে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে , শিল্পপ্রেমীরা চান কোন ভাবেই যেন ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী এই বাঁশ শিল্প কালের আবর্তে হারিয়ে না যায়।