সব

তিন সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Friday 9th June 2017at 6:24 pm
86 Views

5

ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর তুরাগে নিজের তিন সন্তানকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন। নিহতরা হলেন, বড় মেয়ে শান্তা (১৩), ছোট মেয়ে শেফা (৮) ও ৮ মাসের ছেলে সাদ এবং তাদের মা রেহেনা (৩৮)।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, তিন সন্তানের গলায় ওড়না পেঁচানো রয়েছে। যার মধ্যে বড় মেয়ে শান্তার গলায় হলুদ রঙের ওড়না দিয়ে পেঁচানো এবং দুই পা গোলাপি রঙের জরজেট ওড়না দিয়ে বাধা রয়েছে। অপর দিকে পরনে গোলাপি রঙের ওড়না ও সেলোয়ার পরিহিত রয়েছে। ছোট মেয়ে শেফার গলায় হলুদের মধ্যে সাদা ওড়না রয়েছে। এছাড়াও গায়ে লাল কালো রঙের ছেলোয়ার কামিজ পরিহিত রয়েছে। অপর দিকে ৮ মাসের ছেলে সাদের গলায় নীল ও সাদা রঙ্গের গ্রামীণ ওড়না পেঁচানো রয়েছে। অপরদিকে সাদা রঙের প্যান্ট ও জামা পরিহিত আছে। এছাড়াও ছোট মেয়ের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে।

ঘটনাস্থলে তুরাগ থানা পুলিশসহ উত্তরা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছে। চারদিকে অত্র এলাকার স্বজনরা লাশ দেখতে এসে ভীড় জমিয়ে আছেন। এছাড়াও পুলিশ নিহতদের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করছেন।

নিহত রেহেনার স্বামী মো. মোস্তফা কামাল যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আমি ইফতারের পর বাসা থেকে বের হয়েছি। তারপর রাত ১২টার দিকে এসে দেখি দরজা বন্ধ। রুমের ভেতরে অন্ধকার। পরে লাইট জ্বালিয়ে দেখি, আমার স্ত্রী লাশ ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলছে। তিন সন্তানের লাশ বিছানার উপরে শোয়ানো রয়েছে। বড় মেয়ের দুই পায় রশি দিয়ে বাধানো আছে।

বড় ভাই মাহবুব আলম সাগর যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ছোট বোন জামাই মিরপুর থেকে বোন ও তার সন্তানদের আত্মহত্যার খবর জানায়। কামালের মা, ভাই-বোন তার সম্পত্তি দখলের জন্য দীর্ঘদিন যাবত ধরে অত্যাচার করে আসছিল। অবশেষে তা সইতে না পেরে বোন তার সন্তানদের হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে।

তিন দিন আগে বাজার দিতে এসেছিলাম। তখন শুধু লাউ পাতা রান্না করেছিলো। তখন আমি বাজার সদাই করে দিয়েছি। দশটা মুরগীও দিয়েছিলাম। পরে সে (বোন) বলে, ‘ভাই তুই এখানে আসিস না, মইরা যাইবি’।

বাড়িটি বোনের জামাই কামাল করেছে। পরে কামালের মা, বোন ও মেঝো ভাই ওই জায়গা দখল করে রেখেছে। তারা তাদের ওই বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল।

এছাড়াও কামালের মা ও ভাই-বোন ১২ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছে। কিন্তু তাদের কোন টাকা দেয় নি। অপরদিকে ভাগনি টাকার জন্য স্কুলেরও রেজিস্ট্রেশন করতে পারে নি। এত কষ্টের মধ্যে থেকেও বোন আমাদের কিছুই বুঝতে দেয় নি। কখনো কিছুই আমাদের বলে নি।

তাছাড়াও কামালের তৈরি করা বাসার ভাড়ার টাকাও দেওয়া হয় না তাদের। যা থেকে ৪০ হাজার টাকার উপরেও ভাড়া তুলত তারা বলেও তিনি জানান।

তুরাগ থানার ওসি মাহবুবে খোদা যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘটনাস্থল ওই বাসার ঘরে ভেতর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল বলে বাড়ির মালিক কামালের কাছ থেকে জানতে পারি। তবে লাশের গলায় দাগ দেখে মনে হচ্ছে সন্তানদের হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছে।

তিনি আরো জানান, সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের লাশগুলো ময়নাতন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।

আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমরা দুটি কারণ পেয়েছি। একটি হল সংসারের অভাব অনটন এবং অপরটি জমি সংক্রান্ত বিরোধ।

আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কামালের মা, ভাই বোনদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এ বিরোধ চলে আসছিল।

আত্মহত্যার ঘটনায় কি মামলা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, নিহতের স্বজনরা কি মামলা বা অভিযোগ দেয় তা দেখেই বলা যাবে।

আটক বা গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ যমুনা যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আমরা হত্যার কোনা আলামত পাইনি। প্রাথমিকভাবে দেখে বুঝা যাচ্ছে, তিন সন্তানকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছে। তবে ময়নাতন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

প্রসঙ্গত, তুরাগের কাইলারটেক এলাকা থেকে শুক্রবার রাত ২টায় তিন সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

 

সূত্র যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম


সর্বশেষ খবর