শৈলকুপায় টাকা নিয়ে ৫ জুয়াড়িকে ছেড়ে দিলেন ওসি
ঝিনাইদহ সংবাদদাতাঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ৫ জুয়াড়িকে ধরে টাকার বিনিময়ে গভীর রাতে ছেড়ে দিয়েছে ওসি আলমগীর হোসেন। সোমবার রাতে উপজেলার কাচেরকোল ইউনিয়নের ধুলিয়াপাড়া এলাকা থেকে জুয়া খেলার সময় সরঞ্জামসহ ৫ জুয়াড়িকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। কচুয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই শাহিন ও এএসআই হাফিজ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। তাৎক্ষনিক ওসির নির্দেশে আটককৃত জুয়াড়িদের শৈলকুপা থানায় সোপর্দ করা হয় বলে তারা নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, সোমবার রাতে ধুলিয়াপাড়া এলাকা থেকে জুয়া খেলার সময় অভিযান চালিয়ে সারুটিয়া ইউনিয়নের চর মৌকুড়ী এলাকার তোয়াজ আলী, পারভেজ ওরফে দারোগা, হাফিজ, সোহেল ও ফুয়াদ হোসেনকে আটক করে
কচুয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ। তবে আটককৃতদের থানায় নেয়া হলেও নিয়মানুযায়ী জিডি এন্ট্রি করা হয়নি বলে ডিউটি অফিসার এএসআই রেজাউল করিম জানান।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে কথা বলার জন্য ডিউটি অফিসার জানান। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ধুলিয়াপাড়া থেকে আটককৃত ৫ জুয়াড়িকে ছেড়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই কৌশলে থানায় জিডি এন্ট্রি
করতে কাল বিলম্ব করা হয়। পরে ৫ জুয়াড়িকে ছাড়তে পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন ওসি।
পরিবারের লোকজন টাকা দিতে গড়িমসি করায় ওসি স্বজনদের সামনে জুয়াড়িদের বেধড়ক মারপিট শুরু করে। উপায়ন্ত না পেয়ে আটককৃতদের স্বজনরা ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে গভীর রাতেই তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। অপরদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকালে পুলিশের সোর্স সন্দেহে ধুলিয়াপাড়া গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী ওরফে দফাদারের ছেলে কৃষক রতনকে থানা থেকে ছাড়া পাওয়া জুয়াড়িরা মারধর করে। সেই সাথে থানা থেকে
ছাড়া পেতে ওসিকে দেয়া টাকা রতনের কাছে ফেরৎ চেয়ে তাকে হুমকি দিয়েছে জুয়াড়িরা।
রতন জানান, সোমবার সন্ধ্যা রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় সে ধুলিয়াপাড়া মাঠে পাকা রাস্তার ধারে দাড়িয়ে ছিলো। এরপর ঐ রাতে সেখান থেকে কচুয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ৫ জনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তারা থানা থেকে ছাড়া পেয়ে তাকে সন্দেহ করে মঙ্গলবার সকালে মারধর ও লাঞ্ছিত করে। সেই সাথে পুলিশকে দেয়া টাকা তারা ফেরৎ চেয়ে হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি তিনি সারুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুনকে অবগত করলে চেয়ারম্যান মিমাংসার আশ্বাস দিয়েছেন। সারুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন জানান, উভয় পক্ষ তার কাছে এসেছিলো। তিনি বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করছেন। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, শৈলকুপা থানার ওসি আলমগীর হোসেন আটক বা গ্রেফতারকৃতদের নিজ হাতে লাঠি পেটা করে শারিরিক নির্যাতন করেন। মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে স্বজনদের সামনে আসামীদের বেধড়ক পেটায়। টাকা না পেলে আটককৃতদের পিটিয়ে বিভিন্ন মামলায় চালান দিয়ে হয়রানি করেন।
এছাড়াও ওসি আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ১৩ আগষ্ট রোববার রাতে উপজেলার ফুলহরি গ্রামের মৃত তাহাজ উদ্দিনের ছেলে মিনহাজ উদ্দিন ও একই গ্রামের দবির মন্ডলের ছেলে জামাল মন্ডলকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা দাবী করে ওসি। পরিবারের লোক টাকা দিতে গড়িমসি করলে আটকের ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তাদেরকে আদালতে প্রেরন না করে থানা হাজতে আটকে রাখা হয়। পরে তাদেরকে ১৫ আগষ্ট বিকেলে উমেদপুর ইউনিয়নের ব্রাহিমপুর গ্রামে একটি সংঘর্ষ মামলায় আসামী দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। জামালের স্ত্রী উর্মি ও মিনহাজের স্ত্রী জানান, তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ না থাকলেও হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, শৈলকুপা উপজেলায় প্রকাশ্য জুয়া বন্ধে ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সি.জে.এম) আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন গত ৫ জুলাই ২০১৭ তারিখে ১৪/২০১৭ নং মিস কেস মামলার প্রেক্ষিতে ১৮৬৭ সালের দন্ডবিধির ৫ ধারা মোতাবেক শৈলকুপা থানার ওসিকে জুয়া খেলার সরঞ্জাম জব্দ করে এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। আদালতের এ আদেশ উপেক্ষা করে শৈলকুপা থানার ওসি আলমগীর হোসেন সরঞ্জামসহ আটক ৫ জুয়াড়িকে ছেড়ে দেয়ায় সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযুক্ত শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেনের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়ে বারংবার মোবাইল ফোনে (০১৭১৩৩৭৪১৯৪) কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু-শৈলকুপা সার্কেলের সিনিয়র এএসপি তারেক আল মেহেদী জানান, বিষয়টি তার জানা ছিলোনা। ঘটনাটি তিনি জানার চেষ্টা করছেন।