এখনো রহস্য আর স্মুতিতে প্রিন্সেস ডায়না
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ তার মৃত্যুর পর দু’দশক পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো ব্রিটিশ জনতার হৃদয়ে একইরকমভাবে রয়ে গিয়েছেন লেডি ডায়না স্পেনসার।
মৃত্যুর আগেই রাজ পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল ডায়নার। স্বামী চার্লস পরে বিয়ে করেছিলেন বান্ধবী ক্যামেলিয়াকে।
কিন্তু সম্প্রতি, ব্রিটেনে এক সমীক্ষায়া দেখা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ক্যামেলিয়াকে রানি হিসেবে দেখতে চান। আর চার্লস? ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করেন কুইন এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে চার্লস নন, তার জায়াগায় আসা উচিত প্রিন্স উইলিয়ামেরই। এটাই ডায়নার প্রভাব। মানুষ তাকে আজও স্মরণ করেন।
রাজ পরিবারের আভিজাত্যের বাইরে বেরিয়ে এসে নিজেকে ‘পিপলস প্রিন্সেস’ হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন ডায়না। তার শেষযাত্রায়া শামিল হয়েছিল ২০ লক্ষ মানুষ। সেখানে যেমন বিখ্যাতরা ছিলেন, তেমনি বড় সংখ্যায় ছিলেন আম জনতা। গরিব মানুষরা সেদিন তাদের হৃদয়ের রানির চিরবিদায়ে চোখের জল ফেলেছিলেন। সমগ্র বিশ্বের প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান চাক্ষুস করেছিলেন। এটাই ছিল ডায়না জাদু। যে মোহে আবিষ্ট হয়ে পড়তেন সকলেই।
২০ বছর পরেও যে মোহ কেটেছে এমন নয়। তিনি এখনো স্টাইল আইকন। নীলকান্ত মণির সেই চোখ। তার হাসি। তার পোশাক। সবই আজ মিথ।
১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট শনিবার মধ্যরাতে হঠাৎ-ই টিভিতে এই অবিশ্বাস্য খবরটি ভেসে উঠেছিল। ডোডি ফায়াদের সঙ্গেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ডায়না। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে চলে গেছেন তিনি।
সকলেই জানতেন প্রিন্স চার্লসকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ডায়না স্পেনসার। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি তথ্যচিত্রে দেখা গিয়েছে, তিনি নিজমুখেই বলছেন, ১৯৮১ সালে ওই বিয়েটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আসলে চার্লস-ডায়না সম্পর্ক কোনো দিনও মধুর হয়ে ওঠেনি।
অসম্ভব সুন্দরী ও ব্যক্তিত্বময়ী ডায়নার পাশে ফিকে হয়ে যেতেন চার্লস। প্রিন্সেস ডায়না যেখানেই যেতেন, তাকে ঘিরে জনতা উদ্বেলিত হয়ে উঠত। তার ছিটেফোটাও কখনো চার্লসের ক্ষেত্রে দেখা যায়ানি। এমনকী, দু’জনে সরকারি সফরে যখন বেরিয়েছেন, তখনো দেখা গেছে, মানুষ প্রিন্সেসকে তাকে একবার দেখতে চাইছেন। তার নামেই উঠছে জয়াধ্বনি। কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না তার পাশে থাকা প্রিন্স চার্লসকে। এটাই ছিল তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা।
প্রিন্সেস ডায়না সবকিছু ঠিক করেছেন এমনটা নিশ্চই নয়া। আসলে রাজবাড়ির যে গণ্ডি কখনো টপকানো উচিত নয়, তা তিনি পেরিয়ে গিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ না রেখে নিজেকে জনতার মাঝে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন ডায়না। তার এই শিক্ষা আজ তার ছেলেরা মেনে চলছেন।
সকলের প্রিয়া যুবরানি ডায়না যে ছিলেন একজন মা-ও। যে মাকে তার ছেলেরা আজও চোখে হারায়া। তার শিক্ষায় নিজেদের শিক্ষিত করে পরলোকগত মাকে শ্রদ্ধা জানাতে চায়। বেঁচে থাকলে আজ নিশ্চয়ই উইলিয়াম ও হ্যারির এই চিন্তাধারার জন্য গর্ববোধ করতেন প্রিন্সেস। এমনটাই তো তিনি চেয়েছিলেন। যে জমানায় এইডস রোগী বা গৃহহীনদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাত না, তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রিন্সেস ডায়না।
প্রিন্স হ্যারি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন প্রিন্সেস অব ওয়েলস। তিনি অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু আমাদের কাছে তিনি মা। আমরা তাঁর অভাব বোধ করি। আমার প্রতিদিনই মনে হয়, তিনি আমাদের পাশে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, মা’র অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ করার আপ্রাণ চেষ্টা আমি করব। প্রিন্স উইলিয়ামও বলেছেন, আমি সবসময় এটাই ভাবি তিনি কী চাইতেন? আমি আর হ্যারি এমন কাজই করব, যাতে তিনি গর্ববোধ করেন।