সব

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Thursday 31st August 2017at 12:32 pm
FILED AS: ধর্ম
52 Views

স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা।’

অর্থাৎ, ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আমি হাজির, তোমার কোনো অংশীদার নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার, তোমার কোনো অংশীদার নেই।’– এই ধ্বনিতে আজ মুখরিত হবে পবিত্র আরাফার ময়দান।

যেদিকে চোখ যায়, যতদূর দেখা যায় সবখানে আল্লাহর প্রেমে মশগুল হজযাত্রী। সব স্রোত এসে মিশেছে এই ঐতিহাসিক ময়দানে, যেখানে দাঁড়িয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ, আর তার মাধ্যমে ইসলাম পেয়েছিল পূর্ণতা। সেই স্মৃতি বুকে ধরে হজযাত্রীদের কণ্ঠে এক ধ্বনি- আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক। তাদের সমস্বরে উচ্চারণে প্রকম্পিত হচ্ছে চারদিক।

হজযাত্রীরা আজ এখানে ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়ে দেবেন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই মিলে এক জাতি- মুসলিম। সবাই এক আল্লাহর অতিথি। আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়া ও সেখানকার ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করাকেই হজের প্রধান অংশ বলা হয়। তাই আজকের এ দিনকে হজের দিন বলা হয়। আজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হজযাত্রীরা অবস্থান করবেন এখানে। এর মধ্যে মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেয়া হবে। হজযাত্রীরা ইমামের পেছনে একসঙ্গে জোহর ও আছরের নামাজ আদায় করবেন। এর আগে গতকাল জোহরের নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছেন লাখ লাখ হজযাত্রী। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় পবিত্র হজের ৫ দিনের আনুষ্ঠানিকতা।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত মিনাতেই অবস্থান করেন হজযাত্রীরা। সেখানে আজকের ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় শেষে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা ছুটেছেন আরাফাতের ময়দানে। মিনা থেকে আরাফাতের ময়দান ১০ কিলোমিটার বা ৬ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে। আজ মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করেই কেউ পায়ে হেঁটে, হুইল চেয়ারে, বাসে করে, যে যেভাবে পারেন সেভাবেই ছুটছেন আরাফাতের ময়দানে। সেখান থেকে হজযাত্রীরা রওনা দেবেন মুজদালিফার দিকে। মুজাদালিফায় গিয়ে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন তারা। সেখানেই রাত্রিযাপন করবেন খোলা আকাশের নিচে। গতকাল মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সারা বিশ্ব থেকে সমবেত হওয়া লাখো হজযাত্রী। এর আগে তারা সমবেত হয়েছিলেন পবিত্র মক্কা নগরীতে। গতকাল মিনায় তাঁবুতে অবস্থানকালে ধর্মীয় বক্তাদের মূল্যবান বক্তব্য শোনেন নারী-পুরুষ হজযাত্রী পাশাপাশি বসে। তার আগে মিনায় নামে হজযাত্রীর ঢল। হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষ। তারা ডানে বামে তাকাননি। এক আল্লাহর ধ্যান করতে করতে এগিয়ে যান পবিত্র নগরী মিনার দিকে। এ এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। মঙ্গলবার সূর্য ডোবার পর থেকে এসব হজযাত্রী পবিত্র মিনায় সমবেত হওয়া শুরু করেন। তাদের মুখে আল্লাহর বাণী। দমে দমে আল্লাহকে ডাকছেন। হাতে পানির বোতল। কব্জিতে বাঁধা নাম, পরিচয়বাহী ব্রেসলেট। পিঠে ব্যাগ।

এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হাজিরা কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন, কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় এসে আরও দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করবেন।

মিনার কাজ শেষে মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর যারা মদিনা শরিফে যাননি, তাঁরা মদিনা শরিফ যাবেন। যারা আগে মদিনা শরিফ গেছেন, তাঁরা নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।

এদিকে সৌদি হজ মন্ত্রণালয় ও মোয়াচ্ছাসা কার্যালয়ের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, মক্কা, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজিকে বিনা মূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান হাজিদের নানা উপহার দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, পবিত্র কাবা শরিফকে আবৃত করে রাখা কাপড়টিকে আরবরা বলে কিসওয়া আর আমরা বলি গিলাফ। আজ কাবা শরিফের গায়ে পরানো হবে নতুন গিলাফ। প্রতি বছর ৯ জিলহজ অর্থাৎ হজের দিন হাজিরা আরাফাতের ময়দানে থাকেন। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। পুরনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপহার দেয়া হয়।

কাবা শরিফের দরজার ও বাইরের গিলাফ দুটিই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরা বানানো হয়। চারটি টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো পরস্পর সেলাইযুক্ত।

জানা যায়, নতুন গিলাফটি তৈরি করতে ১২০ কেজি স্বর্ণ, ৭০০ কেজি রেশমি সুতা ও ২৫ কেজি রুপা লাগে। গিলাফের দৈর্ঘ্য থাকে ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪ মিটার।


সর্বশেষ খবর