পৃথিবী যখন নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যায়, তখনও জেগে থাকি আমরা
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ‘পৃথিবী যখন নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যায়, তখনও জেগে থাকি আমরা৷ পেটে খিদে৷ বুকে তৃষ্ণা৷ পরিশ্রান্ত৷’ এ কবিতার লেখক ইয়াসের নিকসাদা, তার বয়স মাত্র ১৫৷ আফগানিস্তান থেকে ইরান হয়ে এসে পৌঁছেছে সুদূর জার্মানিতে।
ইয়াসের একা নয়, তার মতো আরও বহু কিশোর-তরুণ ইউরোপে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে আফগানিস্তানের ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য৷ তাদের দিবারাত্রির কাব্য লিখে চলেছে সর্বদা, যখনই সুযোগ মিলছে।
সেসব কবিতা নিয়েই সম্প্রতি জার্মানিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ পুরস্কৃত করা হয় কম বয়সী ৬ আফগান কবিকে৷ তাদের বয়স ১৪-১৮ বছরের মধ্যে৷ নিজেদের কবিতায় সবাই লিখেছে দেশ ছেড়ে আসার যন্ত্রণা ও ভয়াবহতা৷
ইয়াসেরের কাছাকাছি বয়সের আরেক কবি লিখেছে- ‘চোখের সামনে গ্রামের সব মানুষকে মেরে ফেলছিল ওরা৷ একসময় সেই রক্তপাত বন্ধ হলে৷ আমরা বুঝতে পারলাম, আজকের মতো রক্তের খিদে শেষ হয়েছে ওদের।’
জার্মানির এলজে লাসকার-শুলার সোসাইটি দিয়েছে এ পুরস্কার। অনেকেই জানেন, শুলার নিজেও ছিলেন এক বিশিষ্ট কবি ও শরণার্থী৷ ইহুদি শুলার নাৎসি আমলে জেরুজালেমে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ তার কবিতাতেও ধরা পড়েছিল শরণার্থীর যন্ত্রণা৷ ভিনদেশে জীবন কাটানোর যন্ত্রণা জড়িয়ে ছিল তার লেখার পরতে পরতে৷ সে কথা মনে রেখেই প্রতি বছর শুলারের নামে একটি পুরস্কার দেয় শুলার ট্রাস্ট৷ এবার যে পুরস্কার পেলেন আফগান উঠতি কবিরা।
পরিবার বিচ্ছিন্ন এ কিশোররা জানে না, আদৌ আর দেশে ফিরতে পারবে কিনা৷ ইয়াসের যেমন বলেছে ভিনদেশে চলে আসা কঠিন৷ কিন্তু আরও কঠিন নিজের দেশে ফিরে যাওয়া৷ সে রাস্তা আপাতত বন্ধ৷ কিন্তু তারা ফিরতে চায়৷ দেখা করতে চায় পরিবারের সঙ্গে৷ পরিবার ভালো না থাকলে নিজেদেরও ভালো রাখা যায় না৷
আফগান তরুণদের লেখা পড়ে ও কথা শুনে মুগ্ধ জার্মানির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা৷ অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তারা বলেন, বয়সের তুলনায় অনেক বড় হয়ে গেছে ওই কবিরা৷ কারণ জীবনযুদ্ধ খুব কাছ থেকে দেখে ফেলেছে তারা৷ তাদের মতো প্রতিভাদের পাশে যদি দাঁড়ানো যায়, একটা অন্যরকম সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন তা হলে দেখাই যায়৷
রাজনীতি চলে রাজনীতির মতো, কূটনীতি কূটনীতির মতো৷ সেখানে কেবলই যুদ্ধ আর হানাহানি৷ তবু মানবতার জন্য যুদ্ধ আগে ছিল, এখনও আছে৷ সে ব্যাটন কখনও ছিল লোরকার মতো কবিদের হাতে, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েও যারা কবিতা বলতে পারতেন৷ ছিল কবি একরম্যানের হাতে৷ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবরিজিনাল যে কবি ঔপনিবেশিক দাসত্বের কথা লিখেছেন নিজের কবিতায়৷ এখন হয়তো সেই ব্যাটনই চলে এসেছে অসংখ্য আফগান ও সিরিয় শরণার্থীদের হাতে৷ জীবনের এক অন্য উপাখ্যান লিখছেন তারা৷