নড়াইলে ডুমদি গ্রামে বিজয় সরকারের জন্মজয়ন্তী লোকজ উৎসব
নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী, একদিন ভাবি নাই মনে…। এই পৃথিবী যেমন আছে,তেমনি ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে, একদিন চলে যেতে হবে…। তুমি জানো নারে প্রিয়, তুমি মোর জীবনের সাধনা, নবী নামের নৌকা গড়, আল্লাহ নামের পাল খাটাও, বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন, কূলের তরী খুলে দাও…। কিংবা আল্লাহ রসূল বল মোমিন, আল্লাহ রসূল বল, এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা, সোজা পথে চল……এসব জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল,বিজয়গীতির রচয়িতা চারনকবি বিজয় সরকারের ১১৬তম জন্মদিন আজ।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও গায়ক,মরমী কবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী এবং মার নাম হিমালয়া দেবী। তার শৈশবকাল এবং জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে প্রিয় জন্মভূমি ডুমদিসহ নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায়।
ছেলেবেলা থেকেই তিনি (বিজয় সরকার) কবিতা, গান রচনা ও সূরের মধ্যে ডুবে থাকতেন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় তিনি আর বেশিদূর এগুতে পারেননি। মাত্র নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তার লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটে।মতান্তরে তিনি ম্যাট্রিক পাশ। এরপর তিনি গানের দল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। তিনি একাধারে গানের রচয়িতা ও সূরকার। তিনি প্রায় এক হাজার ৮০০ গান রচনা করেছেন। কবিগানের আসরেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। মাতিয়ে তুলতেন দর্শক-শ্রোতাদের । কোন কোন মঞ্চে তৎক্ষনাৎ নিজের রচিত আধ্যাতিœক গান পরিবেশন করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। কবি গানে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি চারণকবি ও সরকার উপাধিতে ভূষিত হন। জীবনের শেষ বয়সে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৮৫ সালের ৪ডিসেম্বর তার মৃত্যুর পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ার বাড়িতে তাকে সমাহিত করা হয়। লোকজ সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩
সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
বিজয় সরকারের জন্মদিন উপলক্ষে কবির জন্মস্থান নড়াইলের ডুমদিতে ২০ ফেব্রুয়ারি এবং আগামি ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি লোকজ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কবির জন্মভিটা ডুমদিতে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ,নগর কীর্তন, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন,প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়গীতি পরিবেশিত হবে।আগামি ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি। সভাপতিত্ব করবেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক ও বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো: এমদাদুল হক চৌধুরী।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাউল শিল্পীরা সাড়া জাগানো বিজয়গীতি পরিবেশন করবেন। বিজয় সরকারের ১১৬তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন প্রচার উপ-পর্ষদের আহবায়ক সুলতান মাহমুদ জানান, তিনদিনব্যাপী জন্মজয়ন্তী উৎসব সফল করতে ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
এ সময় অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শরিফুল ইসলাম বাবলু, মো.শাহীদুল ইসলাম শাহী, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যা ।