পৈতৃক পেশা ধরে রাখলেও অন্ধকার ঘরে লোহা পেটানো কাজ সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন!
উজ্জ্বল রায়ঃ নড়াইলে কয়েক শতাব্দীর পৈতৃক পেশা ধরে রাখলেও অন্ধকার ঘরে লোহা পেটানো কাজ সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন রাতদিন খেটেও সচ্ছলতা আসে না নড়াইলের কামার পাড়ায় কামারশালার অন্ধকার ঘরে লোহা পেটানো আর শান দেয়ার কাজ চলছে অবিরাম।
নড়াইল সদরের কমলাপুর, শিঙ্গাশোলপুর, তুলারামপুর, গোবরা, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শিয়েরবর, রায়গ্রাম, লাহুড়িয়া নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া, নড়াইলের নড়াগাতিসহ আরো কয়েকটি এলাকায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কামারপাড়া। তাদের তৈরি জিনিসপত্রের সুনাম রয়েছে মাগুরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ, ঢাকা, চিটাগংসহ কয়েকটি জেলায়। এখনো হাতেটানা হাপর, উন্মুক্ত চুলা, হাতুড়ি, ছেনি আর রেতি দিয়ে কাজ করেন নড়াইলের কামাররা।
এ জেলার কামাররা বংশানু ক্রমে কয়েক শতাব্দীর ঐতিহ্য ধরে রাখলেও আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। যদিও তাদের হাতে বানানো দা, ছুরি, বঁটি নড়াইল ছাড়িয়ে আরো কয়েকটি জেলায় যায়। গ্রামাঞ্চলে এখনো চাহিদা থাকলেও প্রাচীন পদ্ধতিতে বানানো এসব লৌহ অস্ত্র শহরের বাজার ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে বাজার। অনেক কামারই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
নড়াইলের কামার পাড়া গুলো ঘুরে দেখা গেছে, কামারেরা জানান, খদ্দেরের পছন্দমতো তৈরি করেন বিভিন্ন সাইজের চাপাতি, বড় ছুরি, চামড়া ছোলার ছোট ছুরি, দা, বঁটি, কুড়াল, কাস্তে আর ছোট চাকুর মতো লোহার অস্ত্র। তাদের কাছ থেকেই জানা যায়, জেলায় বিভিন্ন হাট, বাজার ও বিভিন্ন গ্রামে দুই শতাধিক কামারশালা রয়েছে।
আর এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছে ১১ শতাধিক লোক। নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলার ছোট-বড় অন্তত ১৫টি হাট-বাজারে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয় এসব অস্ত্র। আকারভেদে একেকটি চাপাতি ৪৫০- ৫৫০ টাকা কেজি, ছুরি ৪০০-৫০০ টাকা পিস, ছোট ছুরি ৭০-৯০ টাকা পিস, বঁটি ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি, একটি কাস্তে ১৭০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়।
শিঙ্গাশোলপুর বাজারের কামার কারিগর দেবু জানান, তার বাপ-দাদারা এ
পেশায় ছিলেন। তিনিও ছোটবেলা থেকে এ কাজ করেন। স্কুলে যাননি। একজন কামার দিনে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা এবং একজন হেলপার (সহযোগী) ২৩০ থেকে ৩৫০ টাকা রোজগার করেন বলে জানান তিনি। তবে কামারদের তৈরি জিনিসপত্রের দাম বেশ ভালো হলেও চাহিদা দিন দিন কমে যাওয়ায় এ পেশায় পেটের ভাত হওয়ায়ই কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানান কমলাপুর এলাকার তপন কামার।
তিনি আমাদের জেলা প্রতিনিধিকে জানান, তাদের এলাকায় অনেকেই পেশা পরিবর্তন করছেন। একযুগ আগে যে পরিমাণ কামারশালা ছিল, এখন এক-তৃতীয়াংশ টিকে আছে। পৈতৃক পেশা ধরে রাখলেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি কামারশালাগুলোয়।
তাই কামারদের সন্তানরা এ পেশায় আসছে না। তাদের আধুনিক কৌশল ও যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন তিনি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), নড়াইল শিল্প সাহায়ক কেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক বলেন, নড়াইলের কারিগরদের তৈরি জিনিসপত্রের মান খুবই ভালো। কারিগররা যদি কোনো প্রতিষ্ঠান গড়তে চায়, আমরা সাহায্য করব। কামারদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।