সব

দারিদ্র্য কমলেও কমছে না বৈষম্য

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Monday 26th February 2018at 6:20 pm
97 Views

স্টাফ রিপোর্টারঃ বৈশ্বিক মাপকাঠিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য কমিয়ে আনছে দেখালেও কমছে না বৈষম্য। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে এই বৈষম্য সবচেয়ে বেশি।

সামাজিক অন্যায্যতাকে এই বৈষম্যের জন্য দায়ী বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তাঁর মতে ভূমি অধিকার না থাকা, সবার জন্য সমান সুযোগের অভাব, বাজারে আধিপত্য, মানব সম্পদের সুষম উন্নয়নের অভাব এবং সর্বোপরি অন্যায্য শাসন ব্যবস্থা সামাজিক অন্যায্যতার উৎস হিসেবে কাজ করছে।

অধ্যাপক সোবহানের লেখা ‘চ্যালেঞ্জিং ইনজাস্টিস ইন সাউথ এশিয়া’ গ্রন্থের উপর এক আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে আয়োজিত এই আলোচনায় দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশের ওপর অধ্যাপক রেহমান সোবহানের গবেষণার নির্যাসে বৈষম্য ও সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়। আলোচনায় বৈষম্য দূর করতে অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের সুপারিশগুলোও তুলে ধরা হয়।

আলোচনার শুরুতে দেশের বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান গবেষণায় প্রাপ্ত কয়েকটি বিষয় তুলে ধরে জানান, অন্যায্যতাপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা থেকে দারিদ্র্যের জন্ম। দারিদ্র্য বিমোচনের সনাতনী আলোচনাগুলোতে দারিদ্র্যের প্রাথমিক উৎস উঠে এসেছে তবে সেগুলো বিস্তারিত এবং যথেষ্ট নয়।

দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর বৈষম্য পরিস্থিতির আলোকে অধ্যাপক সোবহান বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের বৈষম্য তুলে ধরে বলেন: সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণখাতে মারাত্মক বৈষম্য হচ্ছে।

কেবল শহুরে সম্ভ্রান্তরাই নামী সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ার সুযোগ পাচ্ছে, ভালো হাসপাতালে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ, কম আয়ের মানুষ এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন: ভূমিহীনদের জন্য খাস জমি বরাদ্দের কথা থাকলেও বাস্তবে সেটা হয়না। শুধু এই বৈষম্যগুলো নয়। সংগ্রামী মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ব্যাংক ঋণ পেতেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন: দারিদ্র্য দূর করে বৈষম্য কমিয়ে আনতে নীতি-পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও সেগুলো বাস্তবায়নের আগেই নীতি-পরিকল্পনা পাল্টে যায়। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এই চিরাচরিত প্রবণতা এখন আর আশা করা যায় না।

মাঝে মাঝে রাজনৈতিক নেতারা, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা আন্তরিক হলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমলাতন্ত্র। ঋণ প্রাপ্তিতেও আছে বৈষম্য। উৎপাদনশীল কাজের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার জন্য দরকারি ব্যাংকঋণ সাধারণ মানুষ পায় না। অথচ এরা বিশ্বাসযোগ্য। উল্টো বহু টাকার মালিকরা বড় বড় ঋণখেলাপী।

তিনি আরও বলেন: নতুন নতুন ব্যাংক হচ্ছে কিন্তু প্রান্তিক জনগণ থেকে শুরু করে সবাইকে আর্থিক ব্যবস্থায় আনতে ভিন্ন ভিন্ন কার্যকর পন্থায় না গিয়ে সেই সনাতনি ব্যাংকিং করে যাচ্ছে। তাই ৫৬ টি ব্যাংক কার্যত সাধারণ মানুষকে অর্থনীতির মূলধারায় কতটুকু সম্পৃক্ত করতে পারছে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগের আলোচনায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ বলেন: শিক্ষা বৈষম্য কমানোর কথা, অথচ দেশের নানা পর্যায়ে নানারকম শিক্ষা, শিক্ষার মান। অর্থাৎ শিক্ষা ব্যবস্থাতেই আছে বৈষম্য। সেটা পাবলিক-প্রাইভেট দু’ক্ষেত্রেই আছে।

জনগণের ট্যাক্সের টাকায় ক্যাডেট কলেজ, মডেল স্কুলগুলোতে পড়ছে উচ্চ বিত্ত, অপেক্ষাকৃত সুবিধাভোগীদের সন্তানরা। মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী মাদ্রাসার। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক বিষয়, চিন্তার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষায় মাধ্যমিক পর্যায় পার করছে।

দেশ মধ্য আয়ের দেশ হচ্ছে। এটা কেবল টাকার অঙ্কে না মেপে মধ্যম আয়ের দেশের অন্যান্য কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্য অর্জনের কথা ভাবতে হবে।

আলোচনা সভায় বৈষম্যগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ‘প্রমোটিং ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া’ আলোকে কয়েকটি সমাধানমূলক সুপারিশও তুলে ধরা হয়।

বৈষম্য দূর করতে ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার, বাজার ব্যবস্থার থেকে বিচ্ছন্নদের বাজারের আওতায় নিয়ে আসা, সবার জন্য সমমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য বিমোচনে বাজেটীয় নীতি প্রণয়ন এবং সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ দেয়া হয়।

আলোচনার শেষ পর্যায়ে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের লেখা গ্রন্থটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। গ্রন্থ উন্মোচন ও আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।

অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের নীতি নির্ধারণী সমন্বয়ক ড. আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ প্রমুখ ।


সর্বশেষ খবর