এমপি-মন্ত্রী নয়, কারিগর হতে চাই
স্টাফ রিপোর্টার ঃ আমি সরকারের তল্পীবাহকও না, আবার সরকার বিরোধীও না। সমালোচনা করা, উপদেশ দেয়া সহজ, কিন্তু উপায় বলা কঠিন। এখন শুধু মিথ্যা বলার প্রতিযোগিতা। সবাই ডাক্তার, হোমিও ডাক্তার ডেলিভারি কিভাবে হবে বলে দেয়। আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। যুবকদের একবগিতে রেখে তৈরি করতে চাই। এমপি-মন্ত্রী নয়, কারিগর হতে চাই।
টাইমনিউজবিডির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে নিজের এমন অনুভূতি জানালেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। ঘণ্টাব্যাপী আড্ডায় জানিয়েছেন ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতনের কথা।দিয়েছেন যুবকদের নিয়ে তার স্বপ্ন ও দায়িত্ব পাওয়ার পর যুবলীগে ব্যতিক্রম কাজের বিবরণ। শুনিয়েছেন যুবলীগ নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা।
তার ভাষায়, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সমস্ত নবীগণকে ছাগল চরাতে দিলেন কেন? ছাগল চঞ্চল প্রাণী। এরা বারো পাতা খায়। ছাগল পালনে কষ্ট, ব্যাথা, পরিশ্রম, শাসন, ভালোবাসা, ধৈর্য, কাজের প্রতি দায়িত্তবোধ সব শিক্ষা হয়। তারপর নবুয়ত দিয়েছেন।
তিনি মনে করেন, যুবকরা সমাজের মূল চালিকা শক্তি। মানুষের যৌবনকালই হচ্ছে নিজেকে গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময়। মানুষ তার জীবনের চারটি স্তর অতিক্রম করে তার মধ্যে যৌবনকালই শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সৃষ্টির কালই হল যৌবনকাল। এ যৌবন কালই হচ্ছে এবাদত করার শ্রেষ্ঠ সময়। যৌবনকালে অর্ধেক খাও, আর অর্ধেক সঞ্চয় করো। যৌবনের সঞ্চয় বৃদ্ধকালের অবলম্বন। শৈশবে লজ্জা, যৌবনে ভারসাম্য এবং বার্ধক্যে ব্যয় সংকোচন ও দূরদর্শিতার প্রয়োজন। এই যুবকদের সন্মান-স্নেহ-ভালোবাসা আর শাসনে গড়ে তুলতে হবে। কর্মক্ষম, যারা স্বপ্ন দেখেন, যারা সাহসী, যারা দায়িত্ব নিতে পারে, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী, যারা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থাশীল তাদের নিয়েই যুবলীগ।
যুবলীগের সমালোচনা ও আগাছা পরিষ্কার ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, যখন কেউ যুবলীগের সমালোচনা করেন তখন আমি খুবই খুশি হই। কারণ আমি নিজে জানি আমাকে কেউ চিনে না। যারা সমালোচনা করেন তাদের মাধ্যমেই জনগণ চিনতে পারে যুবলীগ কি। তাই যারা আমাদের সমালোচনা করেন তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।
আর আগাছা পরিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের সংগঠন, ঘাত-পরিঘাতে অনেক কিছুই ঘটে। অনেকে অনেক কিছুই করে। তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তার তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে একজন বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার বললেন, মাদকের একটি ঘটনায় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ জড়িত। আমি সাথে সাথে তাকে চিঠি দিয়েছি। যারা জড়িত তাদের লিস্ট দেন, আমি ব্যবস্থা নিব।
আমি রাজনীতিবিদ, রাজনীতিজীবী নই
ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, সাবেক রাষ্টপতি জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদদের রাজনীতিজীবীতে রূপান্তর করেছিলেন। আমি রাজনীতিবিদ, রাজনীতিজীবী নই।
তিনি বলেন, জীবনের উত্থান ও পতন দেখেছি।আমি জানি টপ অব হিলে কীভাবে উঠতে হবে, কীভাবে নামতে হবে। এক সময় আমি ছিলাম আমদানী ও রপ্তানীকারক, এরপর শিল্পপতি। আমার ৩টা শিল্পকারখানা আছে। জেনেছি, ব্যবসায়ী/শিল্পপতি মানেই চোর, কোটিপতি।যারা মূলত ব্যবসায়ী তারা ওডিপতি কিন্তু কোটিপতি না। অধিকাংশ এমপি-মন্ত্রী, সচিব, পুলিশ অফিসার, সংবাদপত্রের মালিক অর্থাৎ যাদের অতিরিক্ত ইনকাম আছে তারাই কোটিপতি।
২০০৪ সালে বিএনপি সরকার আমার নামে মামলা দিয়েছে। এলসি খুলতে পারি না। ব্যবসায় ধস। এরপর ১/১১- এর (তত্ত্বাবধায়ক) সরকার এসে তো তছনছ করে দিয়েছে। তখন বুঝেছি, ক্ষমতা কী! ‘ক্ষমতা না দেখানোটাই ক্ষমতা। যারা ক্ষমতায় যায় তাদের অত্যন্ত কাছের মানুষরা ক্ষমতার দম্ভে কষ্ট পায়।কাছের মানুষ, আপন মানুষেরা দূর হতে দূরে সরে যায়। ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী। দেখেছি, অভিযোগ না করলে সহানুভূতি পাওয়া যায় না। কথাটি সত্যি। কিন্তু অভিযোগ করে সহানুভূতির নাম করুণা।এই করুণা নিয়ে মানুষ ভালো অবস্থানে যায়। এক সময় কিন্তু করুণাকারিরাও বিরক্ত হয়। আমি মনে করি, যারা স্বপ্ন দেখে তারাই এগুতে পারে। স্বপ্ন থাকতে হবে। পরিকল্পনা থাকতে হবে। কর্মসূচী নিতে হবে। কাকে দিয়ে কোন কাজটি হবে বা করা যাবে নির্দিষ্ট করতে হবে।
জাতিসংঘে ‘পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট’:
যখন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেলাম। তখন থেকে আমি ভাবতে শুরু করলাম ব্যতিক্রম কিছু করার। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের, বন্ধুদের কাছে জিজ্ঞেস ছিল যুবকদের করণীয় কি? আইডিয়া নিলাম।নিজেকে প্রশ্ন করলাম শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অন্ধভাবে কাজ করবো? না আত্মবিশ্বাসী হব।সিদ্ধান্ত নিলাম শেখ হাসিনাকে নিয়ে জানার। শেখ হাসিনা কে? একটা ম্যাগাজিন বের করার পরিকল্পনা নিলাম। আন্তর্জাতিক লেখকদের লেখা সংগ্রহ করতে বিশ্বের টপ মোস্ট রাইটারদের মেইল করলাম।এরপর সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বোর্ড বসালাম। এতসব তথ্য-উপাত্তে অভিভূত হয়েছি। এক্সরে মেশিনে শেখ হাসিনাকে দেখলাম। এরপর একটি গবেষণা টিম গঠন করে বিশ্বের ২৭টি দেশে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা প্রশ্ন-উত্তর ও মতবিনিময়সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে চেনার, জানার চেষ্টা করলাম। বের করলাম যেটা, সেটা জাতিসংঘে ১৯৪টি দেশের সর্বসম্মত ভোটে পাশ হয়েছে। সেটাই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শন ‘জনগণের ক্ষমতায়ন (পিপলস এমপাওয়ারমেন্ট)’।
আত্মীয়ের সভা যুবকদের মেধা ও মনন কাজে লাগিয়ে এ পর্যন্ত ৩০০ এর অধিক প্রকাশনা বের করেছে যুবলীগের এই চেয়ারম্যান। তিনি জেলা কমিটি/সম্মেলন করার চেয়ে বিবাদ মিটিয়ে সকলকে কাজে লাগাতে চান। তিনি মনে করেন, কমিটি দিলে নবীনদের যায়গা হয়। কিন্তু প্রবীণরা কি যেতে চায়? প্রশ্ন তার। বড়রা ছাড়তে চায় না, আর ছোটরা বড়দের অসম্মান করে। আমরা সরকারে এটাচ। তাই সবকিছু সতর্কভাবে করতে হয়। একটা চেয়ার ভাঙলেও মিডিয়ায় চলে আসে। এজন্য সকলকে নার্সিং ও কাউন্সিলিং- এর মাধ্যমে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করছি। প্রত্যেকটা সভাকে আত্মীয়করণের সভায় রূপান্তর করছি। ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ানো ও মর্যাদাপূর্ণ পদবী দিয়ে পরিবার ও সমাজে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছি। এতে কাজের স্পৃহা বাড়ে। কারো কাজের প্রশংসা না করলে আগ্রহ বাড়ে না।
২০০৯ সালের জুলাই মাসে যুবলীগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওমর ফারুক চৌধুরী। ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের কংগ্রেসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। এর আগে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রামের উত্তর জেলার সভাপতি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।