শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় ভোগান্তিতে কৃষক
ফারুক হোসেন (শেরপুর)প্রতিনিধি:শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় সেচ কমিটির অনুমোদন পেলেও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মিলছে না বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে কৃষকের ভোগান্তি চরমে পৌছেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না এলাকার কৃষকেরা।
এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবী বিদ্যুত সংযোগ না পেলে অনাবাদি থেকে যাবে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে উপজেলায় বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমি। তার মধ্যে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো রোপিত হয়েছে। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ কৃর্তপক্ষ বলছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
প্রাপ্ততথ্য মতে, গত বছরের আবেদনসহ চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ১১৫টি সেচ কমিটির কাছে আবেদন জমা দিয়ে ছিলেন কৃষকেরা। আর এসব আবেদনের পেক্ষিতে বিএডিসির কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দেখে এ উপজেলায় ৮৪টি সেচ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে কাংশা ইউনিয়নের আয়নাপুর গ্রামেই ২৯টি সেচ কমিটির অনুমোদন পাওয়া যায়। কিন্তু সেচ কমিটির অনুমোদন পেলেও এতে মিলছে না বিদ্যুৎ সংযোগ।
কাংশা ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আবেদন করার পর উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই বিদ্যুত সংযোগের জন্য কৃষকরা ঋণ করে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে গভীর নলকুপ স্থাপন করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন। তবুও মিলছে না তাদের সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ।
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে কোন ধরনের সুরাহা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, শুধুমাত্র পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই মিলছে না তাদের বিদ্যু সংযোগ। সরকার যেখানে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাইছে সেখানে আমাদের পল্লী বিদ্যুৎ কৃর্তপক্ষ আমাদের হয়রানী করছে কৃষকদের।
ঝিনাইগাতী কৃষি সস্প্রসারণ কর্মকর্তা ফয়জুন নাহার নিপা জানান, এমনিতেই এ উপজেলা পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় পানির লেয়ার খুব গভীরে এবং মাটিতে পাথর থাকায় গভীর নলকুপ ছাড়া সেচ কার্যক্রম চালানো কঠিন। তবে যেসব এলাকায় গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হলে ইরি মৌসুমে আবাদের পরিমান বাড়বে। উপজেলায় এবার ইরির লক্ষ্য মাত্রা হলো ১৪ হাজার ৪শ ২৩ হেক্টর জমিতে এর মধ্যে ৮ হাজার ৩শ হেক্টরের মত আবাদ হয়েছে। এর পরিমাণ বাড়বে এবং আশা করছি আমাদের লক্ষ্য মাত্রা পূরণ হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা বলেন, এ মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষকরা চরম দূর্ভোগে পড়ে যায়। তার মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির কারনে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় শত শত একর জমি অনাবাদি থেকে যাবে। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে সদাশয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে, শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মাশরুল হক খান মুঠোফোনে জানান, সাদা কাগজে আবেদন গ্রহন করা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ২০১৮ সালের আবেদন গুলোতে সংযোগ দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সালের আবেদন গুলো সার্ভে করে দেখে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিব। গ্রাহকদের হয়রানী করা হচ্ছে এবং আবেদন গ্রহনের সময় কোন ধরনের রশিদ প্রদান করা হয়নি বলে তাকে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, সার্ভে শেষে আমরা আবার ১০০ টাকার ফর্মে আবেদন জমা নিব।