এমপি মাশরাফীকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু পিছিয়ে থাকা নড়াইলবাসীর
নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ (৩১ মার্চ) ২৭৪: চিত্রা, নবগঙ্গা, মধুমতি, কাজলা বিধৌত নড়াইল জেলায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ, চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান, সাহিত্যিক নিহাররঞ্জন গুপ্ত, চারণকবি বিজয় সরকার, জারী শিল্পী মোসলেম উদ্দিনসহ অসংখ্য জ্ঞানী-গুণীর জন্মভূমি এই নড়াইল।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সফল ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। যার অসাধারণ জনপ্রিয়তায় তিনি এখন নড়াইল-২ আসনের এমপি। মাশরাফীর ডাক নাম কৌশিক। বাবার নাম গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন এবং মায়ের নাম হামিদা বেগম বলাকা। বাসা নড়াইল শহরের মহিষখোলা।
মাশরাফী ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকায় তার নানাবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। মাশরাফীর বাবার বাড়ি হতে নানা বাড়ীর দুরত্ব তিন’শ মিটার। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার মা হামিদা বেগম বলাকা বাবা-মার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় অতি আদুরের ছিলেন। মেয়ের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য তার নানি নিজের কাছে রেখেই আদর যত্ন দিয়ে বড় করেছেন। মাশরাফী ঘুরে বেড়ানো, চিত্রা নদীতে সাতার কাটা ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে খুবই পছন্দ করতেন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধূলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। বাড়ির দক্ষিণ পাশেই নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠ। স্কুলের মাঠে বড়দের ক্রিকেট খেলা দেখে দেখে মাশরাফীর ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়।
নব্বইয়ের দশকে নড়াইলের ক্রিকেটার-সংগঠক শরীফ মোহাম্মদ হোসেন উঠতি তরুণদের যত্ন নিতেন। তিনি মাত্র ১১ বছর বয়সের মাশরাফীকে তার ক্লাব নড়াইল ক্রিকেট ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দেন। শুরু হয়ে যায় মাশরাফীর সামনের দিকে এগিয়ে চলার মিশন। মাশরাফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশ করেন নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ২০০৩ সালে। এরপর দর্শন শাস্ত্রে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ক্রিকেটের ব্যস্ততার কারণে তার একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করা হয়নি। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াকালীন সময় নড়াইলে শহরের আলাদাতপুরের সুমনা হক সুমির সঙ্গে ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর এই জুটি দাম্পত্য জীবনের একযুগ পূর্ণ করেছেন। মাশরাফী ও সুমি দম্পত্তি বর্তমানে দুই সন্তানের জনক। প্রথম সন্তান মেয়ে হুমায়রা মোর্ত্তজা ও ছেলের নাম সাহেল মোর্ত্তজা।
গত বছরের ৩০জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা আওয়ামী লীগ হতে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এসময় সারাদেশে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন মাশরাফী। নড়াইলবাসী বিপুল ভোটের ব্যবধানে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে এমপি নির্বাচিত করেন। দেশব্যাপী উন্নয়নের মূল স্রোতধারা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা নড়াইলবাসী মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। বিগত সময়ে নির্বাচিত এমপিরা জেলার উন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এবার জেলাবাসী দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ঘোচাবে বলে মনে করছেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। এরইমধ্যে এমপি মাশরাফীর কর্মকাণ্ডে মানুষের মাঝে স্বত্বির বাতাস বইতে শুরু করেছে।
২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি মাশরাফী নির্বাচনী এলাকায় ফাটা কেষ্ট স্টাইলে কাজ করেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মী, নড়াইল সদর হাপসাতালে চিকিৎসক-নার্স ও পুলিশ প্রশাসন সহ বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। ২৮ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম (বার) ও এলজিইডির নিবাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ে সরেজমিনে বের হন। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য তাৎক্ষণিকবাবে নির্দেশ দেন। তিনি হাওয়াইখালী খাল পুনঃখনন কর্মসূচি, মুলদাইড়-চালিতাতলা সড়ক পাকাককরণের কাজ, মধুমতি নদী ভাঙ্গন এলাকাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এসময় জনগণের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সোমদ্দার বলেন, এমপি মাশরাফী তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে ১শত ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এইসব প্রকেল্পর মধ্যে রয়েছে নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, নতুন সড়ক পাকাকরণ এবং সড়ক মেরামত। এই প্রকল্পটি পাশ হলে আশা করি নড়াইলের রাস্তাঘাটের চেহারা পাল্টে যাবে।’ উন্নয়নকর্মীরা মনে করছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার হাত ধরে নড়াইলের অনেক উন্নয়ন কর্মকা- ঘটতে পারে।
ভৌগলিক কারণে এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে নড়াইল জেলা উন্নয়নের মূল স্রোতধারা থেকে অনেকে পিছিয়ে রয়েছে। পদ্মাসেতু ও মধুমতি নদীর কালনা ঘাটে সেতু নির্মাণের পর যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। নড়াইলে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। আশা করি মাশরাফীর হাত ধরেই নড়াইলে একটি অর্থনৈতিক জোন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ, নড়াইলের মৃত প্রায় নবগঙ্গা, চিত্রাসহ অন্যান্য নদী পুনঃখনন, নদী দখল মুক্ত এবং একটি পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হবে। এছাড়া ক্রাড়াঙ্গন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সবক্ষেত্রেই মাশরাফীর ছোয়ায় পরিবর্তন ঘটবে। নড়াইল চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী বলেন, ‘নড়াইলে এখন পর্যন্ত কোন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। বিসিক শিল্পনগরীও গড়ে ওঠেনি। যার কারণে অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আশা করি এমপি মাশরাফীর মাধ্যমে নড়াইলে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে এবং অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে।’
কৃষক নেতা খন্দকার শওকত আলী বলেন, ‘কৃষিতে সমৃদ্ধ নড়াইল জেলার ফসল জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় পাঠানো হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। আমরা আশা করবো এমপি মাশরাফীর হাত ধরে নড়াইলে কৃষিবান্ধব মার্কেট স্থাপনসহ কৃষকরা যাতে তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সে ব্যবস্থা করবেন।’
এদিকে ক্রীড়াঙ্গনে সমৃদ্ধ নড়াইলে ক্রিকেটের পাশাপাশি টেবিল টেনিস, ভলিবল, মহিলা কাবাডিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে মাশরাফী নির্বাচনে আসার আগের থেকেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ভলিবল, ফুটবল ও ক্রিকেটের খেলোয়াড়দের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। আগামীতে ভাল খেলোয়াড় তৈরিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। গণমাধ্যমকর্মী ও ফুটবল কোচ কার্ত্তিক দাস বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে ফুটবলসহ ভলিবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ফুটবলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৯ জন খেলোয়াড় ঢাকা সেকেন্ড ডিভিশনে খেলার সুযোগ পেয়েছে। আগামীতে নতুন নতুন খেলোয়াড়ের জন্মহবে। ক্রীড়াঙ্গনেও নড়াইল বাংলাদেশের মধ্যে নেতৃত্ব দিবে বলে আশাবাদী।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘ মাশরাফী দেশের সম্পদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রিকেট তারকাকে ‘হিরের টুকরা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এমপি মাশরাফীর হাত ধরে নড়াইলের সামগ্রীক উন্নয়ন ঘটবে। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকা-ে গতিশীলতার পাশাপাশি জেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক যোগাযোগ, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অঙ্গন সহ সর্বক্ষেত্রে মাশরাফীর মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধিত হবে। আমরা মনে করি, খেলার মাঠের সেরা মাশরাফী রাজনৈতিক অঙ্গনেও সেরা হবে।