সব

ফের খালাসের অপেক্ষায় রাশিয়া নষ্ট গম

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Wednesday 6th April 2016at 11:29 am
20 Views

2স্টাফ রিপোর্টারঃ পাচঁ মাসে আগে ব্রাজিল ও ফ্রান্স থেকে আসা দুই লাখ ১০ হাজার টন নিম্নমানের গম বোঝাই চারটি জাহাজ ফেরত পাঠানোর পর এবার রাশিয়া থেকে ৯৯ হাজার ৩০০ টন নিম্নমানের গম নিয়ে আসা দুইটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্হান করেছে।

নিম্নমানের গম নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও ছলে বলে কৌশলে রাশিয়া থেকে আসা এই নষ্ট গম চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের চেষ্টা করছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।

নমুনা পরীক্ষা করে নিম্নমানের গম পাওয়ায় গত সপ্তাহে ৫১ হাজার টন সরকারি গম নিয়ে আসা ‘স্পার লিবরা’ জাহাজকে গত সোমবার এবং ৪৮ হাজার ৩০০ টন গম নিয়ে বৃহস্পতিবার অবস্হান করা ‘ইকুইনক্স ডন’ জাহাজকে মঙ্গলবার ফেরত নিতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

কিন্তু, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দুটি জাহাজে থাকা এক লাখ টন নিম্নমানের গম বেসরকারিভাবে খালাস করতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। স্পার লিবরা জাহাজকে দু’দিন আগে ফেরত যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হলেও এখনও সেটি ভাসছে চট্টগ্রাম বন্দরে।

এদিকে, আরও ৫০ হাজার টন গম নিয়ে পাইপলাইনে থাকা আরেকটি জাহাজ আসছে রাশিয়া থেকে। এ জাহাজটি নোঙর করার কথা ২০ এপ্রিল।

খাদ্য অধিদপ্তরের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে গম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফনিক্স কমোডিটিজ এমসিসিএর স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ইউনিশিপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন জানান, ‘রাশিয়া থেকে আসা ৫১ হাজার টন গমের মান ঠিক না থাকায় ফেরত পাঠাতে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ই-মেইলে চিঠির অনুলিপি পেয়েছি। তবে গমগুলো বেসরকারিভাবে দেশেই খালাস করার চেষ্টা করছি আমরা। অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।’

খাদ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া নমুনা রিপোর্টে দেখা যায়, ‘এমভি স্পার লিবরা’ নামের জাহাজে রাশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ৫১ হাজার টন গম আসে গত সপ্তাহে। নিয়ম অনুযায়ী বন্দরে আসার পর জাহাজ থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদপ্তর। সংগৃহীত এ নমুনায় নয়টি ক্ষেত্রে গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়। মান অনুযায়ী বিজাতীয় উপাদান (গমের খোসা বা ভুসি) থাকার কথা সর্বোচ্চ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে আমদানি করা গমে এসব উপাদান পাওয়া যায় এক দশমিক ০৮ শতাংশ। এ কারণে আমদানি করা গম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

রাশিয়া থেকে ‘এমভি ইকুইনক্স ডন’ নামের আরেকটি জাহাজ সরকারি গম আনে ৪৮ হাজার ৩০০ টন। গত বৃহস্পতিবার নোঙর করা জাহাজ থেকে শনিবার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে এ জাহাজেরও সব গম নিম্নমানের পান খাদ্য অধিদপ্তরের রসায়নবিদরা।

গতকাল মঙ্গলবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এডিএম ইন্টারন্যাশনাল এসএআরএলকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেন খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ রোকা মিয়া। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চুক্তি অনুযায়ী নমুনার গমের ওজন (টেস্ট ওয়েট) এবং বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত গমের উপাদান (হুইট অব আদার ক্লাসেস) নির্ধারিত মানে পাওয়া যায়নি। টেস্ট ওয়েট ৭৬ কেজি/এইচএলের ওপরে থাকার কথা থাকলেও তা পাওয়া গেছে ৭৪ দশমিক ৩ কেজি/এইচএল। আবার হুইট অব আদার ক্লাসেসের উপাদান ৪ শতাংশের নিচে থাকার কথা থাকলেও তা পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। তাই নিম্নমানের এ গম গ্রহণ করবে না খাদ্য অধিদপ্তর। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে তার নিজস্ব খরচে এ গম ফেরত নিতে চিঠিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম জানান, ‘নিম্নমানের গম নিয়ে আসা প্রতিটি জাহাজকেই ফেরত পাঠিয়েছি আমরা। স্পার লিবরা এবং ইকুইনক্স ডন জাহাজকেও গম ফেরত নিতে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। গমের মান নিয়ে কোনো আপস না করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আছে।’

রাশিয়া থেকে নিম্নমানের গম নিয়ে প্রথমে আসা এমভি স্পার লিবরা জাহাজের ৩০ হাজার ৬০০ টন গম খালাস হওয়ার কথা চট্টগ্রাম বন্দরে। মংলা বন্দরে খালাস করার কথা ২০ হাজার ৪০০ টন গম। এমভি ইকুইনক্স ডন জাহাজের ১৯ হাজার ৩২০ টন মংলা বন্দরে ও ২৮ হাজার ৯৮০ টন চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়ার কথা ছিল।

রাশিয়ার গম বোঝাই করে আসতে থাকা অপর জাহাজটিরও প্রায় ৪০ শতাংশ গম খালাস হওয়ার কথা মংলা বন্দরে। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় মংলা বন্দরে নিম্নমানের পণ্য খালাস সহজ হওয়ায় সরকারি গম আমদানিকারকরা সেখানে গম খালাস করতে নিরাপদবোধ করেন। তবে এবার মান যাচাইয়ের ব্যাপারে খাদ্য অধিদপ্তর কঠোর হওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুটি জাহাজকেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফেরত যেতে হচ্ছে।


সর্বশেষ খবর