বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ছে
অনলাইন ডেস্কঃ বর্তমান সরকারের নতুন মেয়াদের প্রথম বাজেটেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কৃষি খাতে ইতিবাচক উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। কৃষির আধুনিকায়ন করতে যান্ত্রিকীকরণে সরকারি ভর্তুকি ও বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত হিসেবে কৃষিতে ভর্তুকি ও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে এ বাজেটে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সার, সেচকাজে ডিজেল বরাদ্দ, বিদ্যুৎ ও কৃষি উপকরণ খাতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ভর্তুকি প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ভর্তুকি দিতে বলা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধানের খরচ কমাতে সেচকাজে ডিজেল ব্যবহারে দেড়শ’ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত কৃষি বাজেটে কৃষি উৎপাদন খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে বহুমুখী উদ্যোগ থাকছে। এর একটি অংশ যাবে গ্রামে। কৃষিঋণ বাড়াতে ও গ্রামের হাটবাজারগুলোকে অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস হিসেবে গড়ে তুলতে ও কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণে স্বীকৃতি প্রদানসহ স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকিসহ উন্নয়ন-অনুন্নয়ন ব্যয়সহ ১৭ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৩ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।
কৃষিতে ভর্তুকি কমাতে দাতা সংস্থার চাপ অব্যাহত থাকলেও সরকার কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে কারও চাপ আমলে নিচ্ছে না। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রেখে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে চায় সরকার। সম্প্রতি বাজেটবিষয়ক এক আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেটে কৃষিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোসহ কৃষকদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ধানসহ ফসলের উৎপাদন খরচ কমাতে সরকার এবার আধুনিক কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষি শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় কৃষির যান্ত্রিকীকরণে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষক বাজার ও ফসল সংরক্ষণের জন্য গুদাম ও কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণের প্রস্তাবসহ কৃষিশিল্প গড়ে তুলতে একটি কর্মপরিকল্পনা বাজেটে তুলে ধরার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে কৃষি খাতে সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় নতুন জাত উদ্ভাবন ও লবণাক্তসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন বিষয়ে গবেষণা বাড়াতে কৃষি গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বোরো চাষে আবার ডিজেল ভর্তুকির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘যে খরচ, ভর্তুকি না পাইলে কেমনে বোরো ধান করব!’
নওগাঁর রানীনগর উপজেলার দামুয়া গ্রামের কৃষক হাফিজ মিয়া বলেন, ‘সরকার কৃষি কার্ড দিয়েছে। কিন্তু সাহায্য পাই না। ধানের দাম পাই না। সরকার সার, বীজ ও ডিজেলের দাম না কমালে ধান চাষ করে কোনো লাভ হবে না। আমরা কৃষি কার্ডের মাধ্যমে সরকারের সাহায্য চাই।’
জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, দেশের বাজেটে কৃষি খাতের সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া উচিত। বাজেটে কৃষকদের জন্য বরাদ্দ ও ভর্তুকি বাড়াতে হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা না হলে কৃষক আর কৃষিকাজ করতে পারবেন না। লোকসান দিতে দিতে কৃষক এখন সর্বস্বান্ত। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বাজেটে কৃষির বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের (ইউজিডি) উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলেন, কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে। কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। বেড়েছে মোট বাজেটের আকার। অথচ বাড়েনি কৃষি বরাদ্দ ও ভর্তুকি। কৃষি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে মোট বাজেটের দুই শতাংশের কম। অথচ জনগণের টাকায় বাজেট হয়। এ টাকা কৃষি খাতে ব্যয় হওয়া উচিত। অব্যাহতভাবে কৃষিতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশ মোট বাজেটের ১০ শতাংশ ভর্তুকি দিতে পারে। আর উন্নত দেশ ৫ শতাংশ ভর্তুকি দিতে পারে। বাংলাদেশ চাইলে এখন যত খুশি তত ভর্তুকি দিতে পারে। দেশের মূল বাজেট বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়েনি কৃষি খাতের বাজেট বরাদ্দ ও ভর্তুকি। ছয় বছর ধরে ভর্তুকি হিসেবে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। অথচ এ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে না।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট হচ্ছে। মোট বাজেটের ১০ শতাংশ কৃষি খাতে বরাদ্দ দিলেও ৫০ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়। সরকার এটা না পারলে অন্তত ৫ শতাংশ হারে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিক কৃষি ভর্তুকিতে। তাহলে দেশের কৃষি ও কৃষক বাঁচবে। কৃষির হাত ধরে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতে পারবে।