সব

গ্যাস সংযোগ সহজ ও দ্রুত করতে নতুন সিদ্ধান্ত

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Monday 10th June 2019at 4:50 pm
64 Views

 

অনলাইন ডেস্কঃ শিল্প-কারখানায় নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান এবং লোডবৃদ্ধিতে গঠিত জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন কমিটি বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজেরাই শিল্পসহ বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ দিতে এবং লোডবৃদ্ধি করতে পারবে। এর ফলে নতুন গ্যাস সংযোগ পেতে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের অপেক্ষা কমবে এবং শিল্প উত্পাদনে গতি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আবাসিক, সিএনজি স্টেশন এবং বাণিজ্যিক খাতে নতুন সংযোগ প্রদান আগের মতো স্থগিতই থাকছে।

দেশে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি বাড়তে থাকলে আবাসিক সংযোগ প্রদান বন্ধ এবং শিল্পে সংযোগ প্রদানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণির আবেদনকারীদের অনুকূলে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান ও লোড বৃদ্ধির জন্য ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতদিন নতুন সংযোগ পেতে ওই কমিটিতে আবেদন এবং অনুমোদনের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হতো। সম্প্রতি জাতীয় গ্রিডে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যুক্ত হওয়ার পর ঘাটতি কমে আসছে। পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে দ্রুত সংযোগ নিশ্চিত করার উপর মনোযোগ দিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে সরাসরি গ্রাহকদের আবেদন গ্রহণ এবং যাচাইবাছাই শেষে সংযোগ প্রদানের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হলো।

গত ১৫ মে এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। বিভাগের উপসচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বাতিল করা হলো। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত গ্যাস সংযোগের আবেদন কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পরিষদ নিষ্পত্তি করবে। নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে শিল্প, বিদ্যুত্ ও সার কারখানাকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।

এদিকে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই আবাসিক খাতে ও ক্যাপটিভ পাওয়ারে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিরুত্সাহিত করছে। যানবাহন বা পরিবহন খাতে সিএনজির পরিবর্তে অটোগ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারে উত্সাহিত করছে। অফিস আদেশে তার প্রতিফলনও ঘটেছে।

এতে বলা হয়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে উত্পাদন ক্ষমতা কম থাকায় ক্যাপটিভ শ্রেণিতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান নিরুত্সাহিত করতে হবে। ভবিষ্যতে সিএনজি ব্যবহার ক্রমান্বয়ে হ্রাসের সম্ভাবনা এবং সহজ বিকল্প হিসেবে অটোগ্যাস থাকার কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থগিত রাখতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজির সহজলভ্যতা এবং ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক শ্রেণিতে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান পূর্বের ন্যায় স্থগিত রাখতে হবে। তবে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কারাগার এ নির্দেশনার আওতার বাইরে থাকবে।

সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বিচ্ছিন্নভাবে শিল্প-কারখানা না গড়তে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করছেন অনেক দিন ধরেই। সারাদেশে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ চলছে। এই অঞ্চলগুলোতে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগ পাওয়া এবং লোডবৃদ্ধিতে সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হচ্ছে। অফিস আদেশটিতে এ বিষয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, সকল বিতরণ কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ কোম্পানির গ্যাস প্রাপ্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে লোডবৃদ্ধি এবং নতুন সংযোগের আবেদন নিষ্পত্তি করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে গ্যাস সংযোগের উদ্দেশ্যে পাইপ লাইন স্থাপনসহ অন্যান্য কার্যক্রম অগ্রাধিকার পাবে।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১১ সাল থেকে শিল্পে গ্যাস সংযোগ নিয়ন্ত্রিত ছিল। গ্যাস সংযোগ প্রক্রিয়া ধীর হওয়ায় নতুন শিল্পকারখানা চালুর সংখ্যা ছিল কম। শিল্পায়ন এবং বিনিয়োগ নির্বিঘ্ন থাকেনি। অনেক শিল্প মালিক-উদ্যোক্তাদের আবেদন জমে গেলেও সেগুলো নিষ্পত্তি করা যায়নি। তাদের বিনিয়োগও আটকে গিয়েছিল। নতুন আদেশের কারণে এক্ষেত্রে গতি আসবে।

২০০৯ সালে সরকার দেশে গ্যাস সংকটের কথা বলে আবাসিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু অবৈধ সংযোগ চলতে থাকে। এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে ফের আবাসিক সংযোগ চালু করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিতরণ কোম্পানিগুলোকে আবাসিকে নতুন আবেদন গ্রহণ করতে মৌখিকভাবে নিষেধ করে দেয় জ্বালানি বিভাগ। তবে এবার লিখিতভাবে আবাসিকে সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগে সরকার গৃহস্থালিতে গ্যাস না দেওয়ার জন্য মৌখিক আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু লিখিত কোনো আদেশ দেয়নি। এবারই প্রথম লিখিত আদেশ দেওয়া হয়েছে। এটি আদেশ পালনে ও শৃঙ্খলা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।


সর্বশেষ খবর