তবে কি ট্র্যাজিক হিরোদের তালিকায় সাকিবের নাম!
খেলাধুলা ডেস্কঃ ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত শিরোপা এনে দেওয়া সম্ভব হয় না! এটি প্রমাণিত, বার বার প্রমাণিত হয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা আর ভারতের যুবরাজ সিং হয়তো এই ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। কারণ ২০০৭ আর ২০১১ এই দুজনের পারফরম্যান্সেই বিশ্বকাপ যেতে তারা। কিন্তু নিজের সম্পূর্ণটা উজাড় করে খেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি অনেক দেশ। এই তালিকায় যুক্ত হলো টাইগারদের নাম। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। তবে দলীয় অর্জনের চাইতে ব্যক্তিগত অর্জনই বেশি! এই তালিকায় সাকিব সবার চাইতে এগিয়ে। ব্যাটে বলে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেও শিরোপা না পাওয়ায় এবার ট্র্যাজিক হিরোর তালিকায় হয়তো সাকিব আল হাসানও জায়গা করে নিলেন।
এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে খেলেছেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ৬০৬ রান এবং বল হাতে ১১ উইকেটই বলে দেয় সে কথা। এরকম দুরন্ত পারফরম্যান্সের পরও শাকিব কিন্তু বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে তুলতে পারেননি। তাই এটি তার জীবনে হয়ে থাকবে বড় ট্র্যাজিডি। শুধু কি সাকিব এমন দুর্ভাগা? অনেক খেলোয়াড়ই আছে বিশ্বে যারা সবার চাইতে ভালো খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি।
১৯৯৬ বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড় মার্ক ওয়ার। বিশ্বকাপটিতে মোট ৪৮৪ রান করেন মার্ক। ফাইনালে অরবিন্দ ডিসিলভার বল হাতে তিন উইকেট ও ব্যাট করতে নেমে অনবদ্য শতরানের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভর করে ইতিহাস রচনা করে শ্রীলঙ্কা। ডি সিলভা স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। মার্ক ওয়া নিজের সেরাটা উজাড় করে দিলেও তিনি স্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছেন।
১৯৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনারের সেমিফাইনালে হারের পর হতাশায় মাঠে হাঁটু গেড়ে বসে পড়া সবার মনে আছে। ওইদিন অবধারিত জয় মাঠে ফেলে আসার পর থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ভাগ্যে জোটে ‘চোকার্স’ বদনাম। বিশ্বকাপে ১৭টি উইকেট ও ১২২.২ স্ট্রাইক রেট নিয়ে শেষের ওভারে মোট ২৩০ রান করে প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছে দেন ক্লুজনার। তবুও ট্রফি না জিতেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয় তাকে।
২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকরের ভাঙা আঙুল নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শোয়েব আখতারকে মারা আপার কাটটি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। বিশ্বকাপজুড়েই রাজ করেছিলেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। সেই বিশ্বকাপে শচীনের করা ৬৭৩ রান এক বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক। পাকিস্তান হোক বা শ্রীলঙ্কা, শচীনের চওড়া ব্যাট ভারতকে নিয়ে গিয়েছিল ফাইনালে। শেষরক্ষা করতে পারেননি শচীন।
২০০৭ বিশ্বকাপে মুত্তিয়া মুরালিধরন অফস্পিনের জালে আটকে পড়েন বহু ব্যাটসম্যান। কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গার ডেথ ওভারে ব্যাটসম্যানের পায়ের পাতা লক্ষ্য করে নির্ভুল ইয়র্কার ছিল শ্রীলঙ্কার ফাইনালে যাওয়ার অন্যতম কারণ। মালিঙ্গা ৪.৮৬ এর ইকোনমি রেটসহ ৮ ম্যাচে ১৮টি উইকেট নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চার বলে চার উইকেট নিয়ে একাই ম্যাচের রং বদলে দেন মালিঙ্গা। শেষে মুরালি ও মালিঙ্গা হয়ে রইলেন সে বারের বিশ্বকাপের পরাজিত নায়ক।
২০১১ সালের ওয়াংখেড়েতে সেঞ্চুরি করার পরে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক মাহেলা জয়বর্ধনে গ্যালারি লক্ষ্য করে ব্যাট তুলেছিলেন। মাহেলার স্ত্রী স্ট্যান্ড থেকে তাকে ইশারায় বলছিলেন, উইকেটে টিকে থাকো। কিন্তু, শ্রীলঙ্কার রান তাড়া করতে নেমে গৌতম গম্ভীর ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাটের জোরে শেষ হাসি হাসে ভারতীয় দল। হতাশায় মাঠ ছাড়তে হয় মাহেলাকে।
২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ছিটকে যাওয়ার পরে মর্নি মর্কেলের কান্না এখনও মনে রয়েছে সবার। তিনিও ট্র্যাজিক নায়ক।