অঞ্জন দত্তে মুগ্ধ ঢাকার দর্শক
বিনোদন ডেস্কঃ দর্শনী শেষ করে অঞ্জন দত্ত যখন ঢাকার দর্শকদের সামনে মাথা নুয়ে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন তখনও মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তন একদম নিস্তব্ধ।
‘কেননা চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি’, ‘একটু ভালো করে বাঁচবো বলে আর একটু বেশি রোজগার’, ‘কালো সাহেবের মেয়ে’, ‘দার্জিলিং’ এর মতো তুমুল জনপ্রিয় গানের গায়ক হিসেবে অঞ্জন দত্তকে এভাবে অভিনয়শিল্পী হিসেবে আবিস্কার করার পর স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা স্তব্ধ হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু যখন সে ঘোর কাটল তখন করতালিতে ফেটে পড়ল মিলনায়তন।
আর্থার মিলারের ‘ডেথ অব অ্যা সেলসম্যান’ অবলম্বনে ‘সেলম্যানের সংসার’ রচনা, নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন অঞ্জন দত্ত নিজেই। আর অভিনয় করেছেন উইলি চরিত্রে। যিনি কি না একজন সেলম্যান। জীবনভর সেলসম্যান।
নাটক শুরুর আগে মঞ্চে অঞ্জন দত্ত তার চিরপরিচিত চেহারাতেই হাজির হন। হাতে গিটার। গাইলেন… ‘আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়, একটু বর্ষা, একটু গ্রীষ্ম, একটুখানি শীত…’
গান শেষ করেই অঞ্জন দত্ত বললেন, ‘আজ আমার একটা বড় স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। আমি চেয়েছি বাংলাদেশের মানুষকে আমার অভিনয় দেখাতে। আমি গায়কের চেয়ে বরাবরই একজন অভিনেতা হতে চেয়েছি। দার্জিলিং এর বোর্ডিং স্কুল থেকে বুকে লালন করা সেই স্বপ্নের পথে হেঁটেছি। কিন্তু মানুষ আমাকে গায়ক অঞ্জন হিসেবেই চিনেছে। আজ এখানে এই দেশের মানুষের সামনে অভিনয়শিল্পী হিসেবে আসতে পেরে আবেগ আপ্লুত, আমি কৃতজ্ঞ।’
সোমবার অঞ্জন দত্তের ৮ সদস্যের নাটকের দলটি ঢাকায় এসে পৌঁছায়। শিল্পকলা একাডেমিতে সেলম্যানের সংসারের প্রদর্শনী হবার কথা থাকলেও অনুমোদন বিষয়ক জটিলতায় তা নাটক সরণির মহিলা সমিতিতে স্থানান্তর করে আয়োজকগোষ্ঠী ছাপাখানার ভুত। এখানের মিলনায়তনে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় দুইটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম প্রদর্শনী বিকেল সাড়ে ৫ টায় ও দ্বিতীয় প্রদর্শনী সোয়া ৮ টায় শুরু হয়। মিলনায়তন ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
যে উইলির চরিত্রে অঞ্জন দত্ত অভিনয়য় করেছিলেন তিনি শেষ জীবনে খেয়াল করলেন আসলে তার সবই বৃথা। এই ত্যাগ, কষ্ট স্বীকার করে যাওয়া, নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাওয়া সবই বৃথা। না বুঝলো দোকানদার, না বুঝলো তার বাড়ির মানুষ। উইলির চরিত্রে অঞ্জন নিজেকে এমনভাবে প্রোথিত করেছেন দর্শককেও চরিত্রের গভীরে চতে হয়েছে। হলভর্তি দর্শককে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যাচ্ছিল একজন উইলি।
এক সময় বয়স হয়ে যাওয়ায় মালিকপক্ষ উইলিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়। উইলি ভারক্রান্ত মন নিয়ে দুই ছেলে বিফ ও হ্যাপির কাছে আসে। সংসার চালানোর জন্য তাদের সেলসম্যানের কাজ নিতে বলে। কিন্তু এই কাজ করতে তারা অপারগ। যাদের জন্য উইলি সারাজীবম খেটে মরে কাজ করে গেলেন তারাও আজ পিতার কথা শুনতে চাইছে না। স্বাভাবিকভাবেই পিতার হৃদয় ভেঙে যায়। হৃদয় ভাঙা অঞ্জন ঢাকার দর্শকদের সামনে এক নতুন চরিত্র।
দ্বিতীয় প্রদর্শনীর পরে সাজ্জাদ হুসাইনের ‘নাট্যজন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অঞ্জন দত্ত। এই গ্রন্থে অঞ্জন দত্তের নাটক জীবনের গল্প লিপিবদ্ধ করেছেন সাজ্জাদ হুসেইন।