গুজবের প্রভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরপরাধ মানুষ – নড়াইলের পুলিশ সুপার
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ সারা দেশে বিভিন্ন রকম গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে একটি কুচক্রী মহল।
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম (বার) বলেছেন, গুজবের প্রভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরপরাধ মানুষ। ছেলে ধরার মতো গুজবে কান দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে অনেককেই। অনেকে অজান্তেই জড়িয়ে পড়ছেন ফৌজদারি অপরাধে। ফলে জেল-জরিমানা এড়াতে সকলের সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী, অপরাধীকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতেই হবে। আর এর ব্যতিক্রম করলে দ-বিধির ১৮৭ ধারা অনুযায়ী, দায়ী ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত- হবেন। এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে না দিয়ে কাউকে আটকে রাখে, তবে দায়ী ব্যক্তিকে দ-বিধির ১৮৬ ধারা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত- করা হবে। পাশাপাশি জরিমানারও বিধান রয়েছে। অন্যদিকে আটক রাখার পর যদি ওই ব্যক্তিকে পিটুনি বা ধোলাই দেয়া হয় তবে কারাদ-ের মেয়াদ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে অনূর্ধ্ব তিন বছর এক মাসে। আঘাত করতে গিয়ে যদি আটককৃত ব্যক্তি গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন তবে ৩৩৪ ধারা দ-বিধি অনুযায়ী, কারাদণ্ডে দণ্ডিত- মেয়াদ বাড়বে আরও এক বছর। সঙ্গে অর্থ দণ্ডেরও ও বিধান রয়েছে। এদিকে আইন অনুযায়ী, হামলার শিকার ব্যক্তির মৃত্যু হলে, দ-বিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তির দশ বছরের কারাদ- বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। আর যদি অপরাধীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যার বিষয়টি প্রমাণ হয় তবে দ- হলো যাবজ্জীবন কারাদ- বা অনূর্ধ্ব দশ বছর মেয়াদের যে কোনো কারাদ-। পাশাপাশি অর্থদ-েরও বিধান রয়েছে। গণপিটুনিতে যদি ওই ব্যক্তি নিহত হয় তবে তার দায় বর্তাবে অপরাধ সংঘটনকারী সব ব্যক্তির ওপর। কেননা আইনে ‘যৌথ দায়িত্বশীলতা’ বলে একটি নীতি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই অভিপ্রায় নিয়ে একাধিক ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করলে, প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে দায়ী হবেন- যেন তিনি নিজেই অপরাধটি করেছেন। তাই গণপিটুনিতে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে, সবাইকে সমভাবে এজন্য দায়ী করা যাবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নড়াইলের নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), শেখ ইমরান, নড়াইলের (কালিয়া সার্কেল) রিপন বিশ্বাস, নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন (পিপিএম), নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি, ডিআইও-১ এস এম ইকবাল হোসেনসহ, নড়াইলের সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম (বার) বলেন, তাই গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে নিরপরাধ মানুষকে ছেলেধরা ভেবে গণপিটুনি দেয়া বা হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে গণধোলাই দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। পাশাপাশি গুজব সংক্রান্ত যে কোন ব্যাপারে আইন হাতে তুলে না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়ার জন্যও জনসাধারণকে অনুরোধ করেছে সরকার। আর গণপিটুনি দিতে গিয়ে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। কোন লোককে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে পুরিশকে জানাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ওইসব সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিতে পুলিশ কর্মকর্তারা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন। ওই সব সমাবেশে ওই ধরণের অপপ্রচার ও গুজবভীতি থেকে মানুষকে সতর্ক করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে কেই যাতে আইন হাতে তুলে নিয়ে নিজেদেরকে বিপদগ্রস্থ করতে না পারে,সে জন্য সমাবেশ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। নড়াইলের সকল থানার ওসি অংশগ্রহন করেছেন। এছাড়াও সমাজের অনেক গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ গুজব বিরোধী সচেতনতা মুলক অংশ গ্রহণ করেন।