এবার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ফেসবুক ব্যবহারে নির্দেশনা
অনলাইন ডেস্কঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিম্ন আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে রোববার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন এই নির্দেশনা জারি করেন।
এতে বলা হয়, নির্দেশনা অমান্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙখলা) বিধিমালা ২০১৭ এর পাশাপাশি প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে।
নির্দেশনার প্রস্তবনায় বলা হয়, বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মাত্রা অতীতের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। এ প্রেক্ষিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব সরকারি কর্মচারীর জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০১৬’ প্রকাশ করেছে। সেখানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য কোনো নীতিমালা বা নির্দেশিকা গ্রহণ করা হয়নি।
এতে বলা হয়, বর্ণিত অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফরমসের সুপারিশক্রমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ ও পরিহার করতে হবে।
অনুসরণীয় বিষয়: প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে; প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের সতর্কতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে; ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং বিচারকসুলভ মনোভাব অবলম্বন করতে হবে; অপ্রয়োজনীয় বা গুরুত্বহীন বিষয়ের তথ্যে স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেওয়া যাবে না; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও বিচারকসুলভ আচরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো তথ্য আদান-প্রদান এবং বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে; নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থসংশ্নিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
যা করা যাবে না: জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থি কোনো প্রকার তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার পরিহার করতে হবে; কোনো মামলাসংক্রান্ত বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভুতি প্রকাশ ও প্রচার পরিহার করতে হবে, রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্নিস্ট কোনো তথ্য মন্তব্য বা অনুভুতি প্রকাশ ও প্রচার; জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভুতি প্রচার ও প্রকাশ; নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভুতি প্রকাশ বা প্রচার পরিহার করতে হবে। কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভুতি প্রকাশ ও প্রচার; সুপ্রিম কোর্টে মাননীয় বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রচার ও প্রকাশ পরিহার করতে হবে।
এছাড়াও সার্কুলারের পঞ্চম নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিচারিক কর্মঘণ্টা পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে ওই সময় (সকাল সাড়ে ৯টা থেকে-বিকেল সাড়ে ৪টা) পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে।
ষষ্ঠ নির্দেশনায় বলা হয়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি নিষেদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। এসব নির্দেশনা অমান্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙখলা) বিধিমালা-২০১৭ এর পাশাপাশি প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে।