কেন বিশ্বের দ্রুততম মানবের বিরুদ্ধে ডোপিংয়ের অভিযোগ উঠল?
খেলা ডেস্কঃ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ২০১৯ সালের আসরে ১০০ মিটার দৌড়ে ৯.৭৬ সেকেন্ড সময়ে বিশ্ব সেরা হয়েছেন ক্রিশ্চিয়ান কোলম্যান। সোনা জয়ী এই অ্যাথলেটকে নিয়ে এখন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমেরিকান এই দৌড়বিদ পদক জয়ের পরপরই তাকে নিয়ে বিতর্ক ওঠে যে ডোপ টেস্টে যথাযথভাবে উত্তীর্ণ না হয়ে কীভাবে তিনি চ্যাম্পিয়ন হলেন। যদিও ক্রিশ্চিয়ান কোলম্যানের বক্তব্য কেবলমাত্র কৃষ্ণবর্ণের বলেই তাকে এমন সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।
২০১৮ সাল থেকে তিনটি ড্রাগ টেস্ট মিস করেন কোলম্যান। ওইবারই তিনি দোহায় ৯.৭৬ সেকেন্ডে দৌড়ে প্রথম হন। এই দৌড়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিশ্চিয়ান কোলম্যান ইতিহাসের সেরা ১০ জন দৌড়বিদের মধ্যে চলে এসেছেন। ২৩ বছর বয়সী কোলম্যান এখন ১০০ মিটার দৌড়ে বিশ্বের ষষ্ঠ দ্রুততম মানব।
অ্যাথলেটদের খোঁজ রাখার ব্যাপারে এন্টি ডোপিং এজেন্সিগুলোর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। যেখানে বলা আছে, অ্যাথলেটরা কখন কোথায় থাকবেন সেটা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। সাথে কোথায় প্রশিক্ষণ করবে এবং রাতে থাকার বন্দোবস্ত কোথায় সেটা জানানোর কথা বলা হয়েছে। যদি ১২ মাসের ব্যবধানে তিনবার এই খোঁজ দেয়ার কাজ করতে কেউ ব্যর্থ হয় তবে সেটা বিশ্ব এন্টি ডোপিং কোড অনুযায়ী নিয়ম ভাঙ্গা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
কোলম্যান মোট তিনবার নিজের অবস্থান সম্পর্কে এমন খোঁজ দিতে ব্যর্থ হলে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও তদন্তের মানদন্ড অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এন্টি ডোপিং এজেন্সি বৈশ্বিক ডোপিং বিরোধী কর্তৃপক্ষের কাছে পরামর্শ চায়। যুক্তরাষ্ট্র এন্টি ডোপিং এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী কোলম্যান তিনবার ব্যর্থ হন নিজের খোঁজ দিতে। ২০১৮ সালের ৬ই জুন এবং ২০১৯ সালের ১৬ই জানুয়ারি ও ২৬শে এপ্রিল। এই তিনবারের মধ্যে ২ বার টেস্ট করে যুক্তরাষ্ট্র এন্টি ডোপিং অ্যাজেন্সি, বাকি দুবার করে অ্যাথলেটিকদের ইনটেগ্রিটি ইউনিট।
তবে আইএসটিআই, অর্থাত পর্যবেক্ষণ ও তদন্তের আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী বছরকে বা ১২ মাসের ব্যাপ্তিকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়, প্রতি ভাগের প্রথম দিন থেকে হিসেব করা হয়। কোলম্যান যে সময় প্রথমবার নিজের অবস্থান জানাতে ব্যর্থ হন, অর্থাৎ ৬ই জুন ২০১৮ থেকে হিসেব করলে, ১২ মাসের হিসেবের প্রথম দিন হয় পহেলা এপ্রিল ২০১৮। যা তৃতীয়বার অবস্থান জানাতে ব্যর্থ হওয়ার অর্থাৎ ২৬শে এপ্রিল, ২০১৯ এর ১২ মাসের বেশি সময় আগে।
বিশ্ব এন্টি ডোপিং সংস্থা এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের এন্টি ডোপিং সংস্থার কাছে এটি পরিষ্কার করলে শাস্তি উঠিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ডোপ বিরোধী কর্তৃপক্ষের এই শাস্তি তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আপিল করতে পারবে বিশ্ব এন্টি ডোপিং এজেন্সি অথবা আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যদি দোষী সাব্যস্ত হতেন কোলম্যান তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিতে পারতেন না।
কোলম্যানের আত্মপক্ষ সমর্থন:
২৩ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ান কোলম্যান আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলেছেন। কৌশলগত কারণে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর কয়েক সপ্তাহ পরেই স্বর্ণ জিতে তিনি বলেন, ‘এটা দু:খজনক যে মানুষ আমাকে নিয়ে যেসব কথা বলে, তারা আসলে আমাকে চেনেনা। আমি সবসময় প্রমান করে আসছি যে আমি এমন একজন মানুষ যে সঠিক উপায়ে কাজ করে যায়। আমি শুধু নিজের ও পরিবারের দিকে নজর দেই, আমি ধন্য যে আমি এখন দ্রুততম মানব।’
তিনি বলেন, ‘আমি যেখান থেকে উঠে এসেছি, মানুষ আসলে ধারণা করে না আমি কিছু জিততে পারব, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। মানুষ ধারণার বাইরে যেতে পারেনা। বিশেষত আমার মতো কালো আমেরিকানের ক্ষেত্রে।’