‘বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে’
বাংলা ডেস্ক ঃ বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ দু:সময় বয়ে চলছে। ৫ জানুয়ারি’২০১৪ ‘একতরফা নির্বাচনের’ পূর্বাপর বাংলাদেশকে ‘বধ্যভূমিতে’ পরিণত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি। খালেদা জিয়ার অভিযোগ, ‘বর্তমান অবৈধ ক্ষমতাসীন জোট সীমাহীন রক্তপাত ও বেপরোয়া নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকারের পরিপূরক। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শূন্যের নিচে অবস্থান করছে’। দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক ও মানবিক অধিকারহারা নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন খালেদা। যারা বাক, ব্যক্তি, চিন্তা, প্রার্থনা, মূদ্রণসহ নাগরিক স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হতে গিয়ে ‘ক্ষমতাসীন স্বেচ্ছাচারী গোষ্ঠীর নৃশংস নিপীড়ণে’ আত্মদান করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি। বাণীতে বিএনপি প্রধান বলেন, আজও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে মানুষ একদলীয় স্বেচ্ছাচারী শাসন, গোষ্ঠী, বর্ণ ও জাতিগত সংঘাতে অবলীলায় খুন ও গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছে এবং অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। জাতিসংঘের সার্বজনীন ঘোষণায় বলা হয়েছে- বিশ্বের সব জাতির সকল মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু দেশে দেশে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসকরা জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার নির্দেশনাগুলোকে তাচ্ছিল্য করে নিজ দেশের জনগণের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে বর্বরোচিত আক্রমণ। শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য জনমতকে অগ্রাহ্য করতে হয়। আর সেজন্য এ সকল গণবিরোধী শাসক গোষ্ঠী জনগণের মানবাধিকারের তোয়াক্কা করে না। সুতরাং দু:শাসনের অচলায়তন তৈরি করতে গিয়ে তারা প্রতিবাদী জনগণের ওপর নামিয়ে আনে পৈশাচিক উৎপীড়ণ। যারা সত্য উচ্চারণ করতে চায় তারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ নাগরিক সমাজের যেই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং কারাবাস, শারীরিক নির্যাতনসহ জখম এবং হত্যারও শিকার হতে হয় বলেও বাণীতে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
‘এদেশে শুধুমাত্র বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাই নন, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশু সহ কারোরই কোনো নিরাপত্তা নাই। তাদের অধিকাংশই গুম, গুপ্ত হত্যা এবং বিচার বহির্ভুত হত্যার শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দল নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টকশো’ আলোচকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে এবং কাউকে কাউকে কারান্তরীণও করে রাখা হয়েছে। ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মনে হয়, ৩৬৫ দিনই এদেশের কোথাও না কোথাও মানুষের মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে’ বলেও অভিযোগ তুলেছেন খালেদা। এ ‘নৈরাজ্যকর দুঃশাসনের ছোবল’ থেকে মুক্তি পেতে এই মুহূর্তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কন্ঠের আওয়াজ তুলে বর্তমান অপশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।
জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশে বর্তমানে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তা দেশের জন্য শুভলক্ষণ নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি সরকারকে মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বড় বড় বুলি নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।