ছাত্রলীগের হামলায় সাংবাদিকরা আহত
স্টাফ রিপোর্টারঃ ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আজও হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত পাঁচ জন ফটো সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
আজ (০৪ আগস্ট) দুপুরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ছবি তুলতে গেলে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনটির আক্রমণের শিকার হয় তারা।
গুরুতর আহত সাংবাদিকরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)’র এ.এম আহাদ, দৈনিক বণিক বার্তার পলাশ শিকদার, নিউজ পোর্টাল বিডি মর্নিং আবু সুফিয়ান জুয়েল ও দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র ফটোগ্রাফার সাজিদ হোসেন ও প্রতিবেদক আহম্মেদ দীপ্ত। এছাড়া, কয়েকজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারের ওপরও হামলা করা হয়েছে। এই ঘটনায় আহতরা হলেন- রাহাত করীম, এনামুল হাসান, মারজুক হাসান, হাসান জুবায়ের ও এন কায়ের হাসিন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ‘দ্য ডেইলি স্টার’র রিপোর্টাররা জানান, শুধু ফটো সাংবাদিকই নয় যারাই ছাত্রলীগের হামলার ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন তাদেরকেই মারধর করা হয়েছে। এমনকি হাতে মোবাইল ফোন থাকলেও অনেককেই হুমকি দিতে দেখা যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। জরুরি প্রয়োজনে এসময় অনেককেই এটিএম বুথের ভেতরে ঢুকে ফোন করতে দেখা গেছে।
আজ দুপুর ২টার দিকে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভের ছবি তোলার সময় লোহার রড ও লাঠি নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রায় অর্ধশত সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়। এসময় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ জন।
এসব ঘটনা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনে ঘটলেও ছাত্রলীগকে নিরস্ত করেনি।
হামলাকারীদের পরিচয়ের বিষয়ে দৈনিক বনিক বার্তার ফটোগ্রাফার পলাশ শিকদার বলেন, “আমি সিটি কলেজের সামনের পুলিশ বক্সের সামনে ছবি তুলছিলাম, তখন এপি’র ফটোগ্রাফার এম এ আহাদকে মারধর করা হচ্ছিল। আমি তাকে বাঁচাতে যাই। তখন হামলাকারীরা আমাকেও মারধর করে। লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়েছে।” তিনি বলেন, “হামলাকারীরা সবাই ছাত্রলীগ। আমরা এই হামলাকারীদের বিচার চাই।”
পুলিশের সামনেই সাংবাদিকদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এমন কোনও অভিযোগ পাইনি।”
গণমাধ্যম ইউএনবির দেওয়া সূত্রমতে, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহাদকে নির্দয়ভাবে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। এই সময় তাঁর মোবাইল ফোন ও ক্যামেরাটিও কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এর পরে তাঁকে পার্শ্ববর্তী ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আহাদ মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এতে তাঁর মাথায় সেলাই পড়তে পারে। তবে তাঁর ওপর কারা হামলা করেছিল, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো- শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব।
এই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। গতকাল (০৪ আগস্ট) রাজধানীর জিগাতলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ। হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা সেখানে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিল।
আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রথম দফা হামলা করেছে এক দল যুবক। শিক্ষার্থীদের দাবি তারা স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন পুলিশ সদস্যরা।
হামলার প্রতিবাদে আজ (রোববার) রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে আরও বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী।