সব

ঝিনাইদহ পিটিআই’র সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু, ফেঁসে যাচ্ছেন পিটিআই সুপার আতিয়ার রহমান

AUTHOR: Primenews24bd Desk
POSTED: Wednesday 2nd January 2019at 9:39 pm
94 Views

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহ সরকারী পরীক্ষন বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত ছাত্র ভর্তি করে যাচ্ছেন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সুপার আতিয়ার রহমান। সরকারী প্রাইমারি স্কুলে যেখানে বিনা টাকায় ভর্তির সুযোগ রয়েছে সেখানে বছরে পর বছর তিনি ৭’শ টাকা থেকে ১১’শ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন ভর্তি বাবদ। এছাড়া সংস্থাপন ফির নামে প্রশিক্ষনে আসা স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে ৩’শ টাকা ও আইসিটি প্রশিক্ষনের জন্য আসা শিক্ষকদের কাছ থেকেও জোর পুর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে।

এ সব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে শিক্ষকদের নাকে খত কিংবা সুপারের পা ধরে মাফ চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দেশের দুইটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে এ নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে ঝিনাইদহ পিটিআই’র সুপারের বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মেহেরুন্নেছা। বিষয়টি তদন্ত করে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন উপপরিচালক অফিস। খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ আক্তারুজ্জামান।

জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৪৪ ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ডিপিএড, আইসিটি সহ মৌলিক প্রায় ২৫ ভাগ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পিটিআইতে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি কিংবা অন্য কোন খাতে টাকা নেওয়া সম্পুর্ন অবৈধ। কিন্তু ঝিনাইদহে রশিদের মাধ্যমে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৭২০ টাকা থেকে শুরু করে ১১’শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ২০১৭ সালে ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলাপাড়ার আবু রায়হান শিশু শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছিল। তার পিতার নাম রাজা বিশ্বাস। আবু রায়হানের দাদা আকবর আলী বিশ্বাস অভিযোগ করেন শিশু শ্রেনীতে ভর্তি হতে সুপার আতিয়ার রহমান রশিদের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ৭২০ টাকা নেন। শহরের ইসলাম পাড়ার আলম অভিযোগ করেন তার ছেলে চতুর্থ শ্রেনীতে ভর্তি করতে ৯০০ টাকা নেন সুপার।

এ ভাবে সাবিহা সুলতানা নামে এক শিশুকে ভর্তি করতে ২০১৮ সালে নেওয়া হয়েছে ৭২০ টাকা।

তৃর্তীয় শ্রেনীতে ভর্তি হতে তামিম আহম্মেদ নামে আরেক শিশুর অভিভাবকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৯০০ টাকা। কর্মতৎপরতা, বার্ষিক ক্রীড়া, শিক্ষা সফর, সাংস্কৃকিত ফিস, উন্নয়ন, মসজিদ, সিলেবাস, টিসি, বিবিধ, বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন, আইডি কার্ড তৈরী, রেজাল্ট, বার্ষিক ম্যাগাজিন ও কাব খাতে এ সব টাকা খাতওয়ারি দেখানো হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে পিটিআইতে ১৮মাস ব্যাপী ডিপিএড প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করা ও ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে এমন অনিয়মের প্রতিবাদ করে অপমান অপদস্ত হয়ে বদলী হন প্রশিক্ষক অরুন কুমার খা। ওই বছরই পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে সুপার আতিয়ার রহমান অধিকাংশ প্রশিক্ষনার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সে সময় প্রতিবাদ করলে শিক্ষক গৌরাঙ্গ বিশ্বাসকে সুপারের বাসায় ডেকে নিয়ে অপদস্ত করা হয়। শিক্ষক গৌরাঙ্গ বিশ্বাস জানান, আমি সুপারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি এ জন্য আমাকে সকলের সামনে নাকে খত দিতে বাধ্য করিয়েছেন সুপার। জেলার শহীদ মোশাররফ হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান ও জিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শারমিন সুলতানা সোহানা বলেন, আমরা ২০১৭ সালে পিটিআই থেকে আইসিটি প্রশিক্ষণ নিয়েছি ১২ দিনের। এসময় আমাদের সকলের কাছ থেকে জনপ্রতি প্রতিদিনের সিট ভাড়া বাবদ ৫০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সিট ভাড়া বা আবাসিক চার্জ বাবদ টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মো: আকতারুজ্জামান জানান, আমি যোগদানের পর থেকেই আজ অবধি সুপার আতিয়ার রহমান আইসিটি প্রশিক্ষন নেওয়া শিক্ষকদের তালিকা দেয়নি। লিখিত ভাবে জানানোর পরও সে দেয় না। এর ফলে জানতে পারছি না কারা আইসিটি প্রশিক্ষণ নিয়েছে আর তারা ঠিকভাবে ক্লাস নিচ্ছে কি না। আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা নীতিমালায় আছে আইসিটি প্রশিক্ষণের জন্য পিটিআই সুপার ডিপিইও এর মাধ্যমে শিক্ষক ডেপুটেশন চাইবেন। কিন্তু তিনি আদৌ তা করেন না। অবশ্যই তিনি শিক্ষা নীতিমালা লঙ্ঘন করে এটি করছেন। বিষয়টি লিখিত ভাবে অধিদপ্তরকেও জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন সুপার আতিয়ারের বিরুদ্ধে খুলনা বিভাগীয় অফিস তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মো: আকতারুজ্জামান।

অভিযোগের বিষয়ে পিটিআই সুপার আতিয়ার রহমান বলেন, আমি ভর্তির জন্য কোন টাকা নিই না। শুধু সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য ভর্তির সময় একবারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রশিদের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়। আর প্রশিক্ষণ কিংবা অন্য কোন বিষয়ে আমি জড়িত না, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, পিটিআই সুপার আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, প্রশিক্ষনার্থীদের লাঞ্ছিত করা সহ নানা অনিয়মের বিষয়ে অনেকেই মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অনেকেই প্রমাণপত্র দেখিয়েছেন। বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করবো এবং সত্যতা পেলে বিভাগীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরকে জানাবো।


সর্বশেষ খবর