মিউচ্যুয়াল ফান্ডে চমক দুরবস্থা আর্থিক খাতে!
আমারবাংলা ডেস্কঃ পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থার মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে গতি ফিরেছে। অন্যদিকে আর্থিক খাতের ব্যাংক, বীমা ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পড়েছে চরম দুরবস্থার মধ্যে। সার্বিকভাবে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী অবস্থায় পড়লেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনতে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ বেড়েছে। যদিও দীর্ঘ সময় ধরেই পুঁজিবাজারের মৌলভিত্তিক এই খাতটি পিছিয়ে ছিল।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। খেলাপি ঋণ ও পর্যাপ্ত আমানত না আসায় তারল্য সংকট কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংক। আর নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান মূলত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করায় তারাও আর্থিক সংকটে পড়েছে।
তারল্য সংকট কাটাতে সম্প্রতি পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমায় ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্সপোজার সীমায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনগত ছাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ছাড় পেয়েছে। তবুও পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট কাটছেই না। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৩টির বা ৮৯ শতাংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। আর একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ারের দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে তিনটির ইউনিটের দাম।
ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭টি কম্পানির মধ্যে ২৯টির ইউনিটের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে অর্থাৎ ১০ টাকার কম। আর আটটি কম্পানির ইউনিটের দাম ১০ টাকা বেশি। খাতভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের ৩০টি কম্পানির মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর বিক্রির চাপ বেশি থাকায় ১৮টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। সাতটি ব্যাংকের শেয়ারের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর ১৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। বীমা খাতের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৪৭টি বীমা কম্পানির মধ্যে ১১টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর ৩৩টি বীমার শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। দুটি কম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও একটির শেয়ার লেনদেন হয়নি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমায় সক্ষমতা বাড়ার কথা থাকলেও কার্যত সেটা হচ্ছে না। কারণ ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। সংকট না কাটায় পুঁজিবাজারেরও কোনো উন্নতি হচ্ছে না।’ ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ‘আস্থাহীনতা থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও শেয়ার বিক্রির চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুতই পুঁজিবাজার ভালো অবস্থায় যাবে।
গতকালের বাজার : গতকাল মঙ্গলবার দুই পুঁজিবাজার ডিএসই ও সিএসইতে শেয়ার বিক্রির চাপে সূচক কমলেও লেনদেন বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ারের দামও হ্রাস পায়। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫১২ কোটি ৯১ লাখ টাকা আর সূচক কমেছে ৩৮ পয়েন্ট। দিন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২৮০ পয়েন্ট। ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ১০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৭৫ পয়েন্ট ও ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দাম কমার শীর্ষে পিপলস লিজিং : পুঁজিবাজারে লেনদেনে দাম কমার শীর্ষে রয়েছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস। ২০০৫ সালে তালিকাভুক্ত এ কম্পানিটির শেয়ারের দাম এখন ৩.৬ টাকা। যদিও অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। এদিকে পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে যাওয়ায় কম্পানিটি ব্যবসা চালানোর যোগ্যতা হারিয়েছে।