২৬ ব্লগারকে সতর্কতামূলক পরামর্শ গোয়েন্দাদের
স্টাফ রিপোর্টারঃ ঢাকায় সক্রিয় ২৬ জন ব্লগারকে সতর্কতামূলক বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েন্দারা। বুধবার অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিম উদ্দিন সামাদ খুন হওয়ার পর এ পরামর্শ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এসব ব্লগারের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ছয়টি চৌকস টিম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
আরও জানা গেছে, ব্লগার নাজিম হত্যাকাণ্ডের পর অন্য ব্লগারদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা। এ সময় তিনজন ব্লগার দেশের বাইরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
গোয়েন্দারা তাদের বলেছেন, বিদেশ যাওয়া না যাওয়া তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরামর্শ মেনে চললে তাদের গায়ে কোনো আঁচড় লাগার আশংকা নেই।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে চার ব্লগারকে টার্গেট করেছিল জঙ্গিরা। এর মধ্যে এসএম নিলয় নামে এক ব্লগারকে খুনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু গোয়েন্দাদের দক্ষতা ও নজরদারির কারণে তা ভেস্তে যায়।
বর্তমানে ব্লগার নিলয় জার্মানিতে আছেন। নিলয় ছাড়াও আরও অন্তত ২০ জন ব্লগার ও লেখক দেশের বাইরে রয়েছেন।
গোয়েন্দারা বলছেন, দেশে থাকা অবস্থায় তাদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। এদিকে জঙ্গিদের উচ্চপ্রযুক্তি জানা গ্রুপ এখন ডি কোডিং প্রযুক্তি (গুপ্তচর বর্ণ বা বর্ণের বিশেষ বিন্যাস) ও টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করছে। যাতে কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ধরা না যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম শনিবার বলেন, জঙ্গিদের তালিকায় স্থান পাওয়া ব্লগার ও লেখকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নাজিম হত্যার পর তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সতর্ক থাকার পাশাপাশি আরও নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে ব্লগারসহ সংশ্লিষ্টদের।
ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম জানান, জঙ্গিরা তাদের কৌশল পাল্টিয়েছে। বিশেষ করে তারা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে এখন রেকি করে। এজন্য তালিকায় থাকা ব্লগার ও লেখকদের আরও কৌশলী হওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকায় থাকা ২৫ থেকে ২৬ জন ব্লগারকে গোয়েন্দাদের পক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্কতামূলক গোপন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে এদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এর আগে অতি ঝুঁকিতে থাকা চারজন ব্লগারকে কৌশল শেখানো হয়েছিল বলেই তাদের রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
এখন নতুন কৌশলে জঙ্গিরা রেকি করছে বলে গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে ব্লগারদের জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে খুনিচক্রের প্রযুক্তি টিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লগারদের পোস্টগুলো নিয়মিত দেখে থাকে।
পাশাপাশি লোকেশন শনাক্ত করার চেষ্টা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্লগার জানান, গোয়েন্দাদের পরামর্শগুলো একেবারেই নতুন। তারা এগুলো অনুসরণ করে চলছেন। এতে তারা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুক খালেদ বলেন, ব্লগারদের খুন ও হামলায় যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
একই সঙ্গে জঙ্গিদের বিভিন্ন স্লিপার সেলের সদস্যদের গোয়েন্দা জালে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি জানান, গোয়েন্দাদের নিরাপত্তায় থাকা ব্লগারদের আরও সতর্ক করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, প্রগতিশীল ব্লগার, লেখক বা বুদ্ধিজীবীদের যারা টার্গেট করে থাকে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তির সহায়তা নেয়।
এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্লোজড গ্র“পে নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ করে। কিলার গ্র“পের সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফ্রি ওয়াইফাই সার্ভিসের সহায়তা নেয়। আবার তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে ঘনঘন স্থান বদল করে।-যুগান্তর।